শীর্ষবিন্দু নিউজ: আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন (এক লাখ ১৪ হাজার ৩৪৮ টাকা) ডলারে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন। চলতি অর্থবছর এ আয় এক হাজার ৩১৪ ডলার। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বক্ততৃায় অর্থমন্ত্রী এ প্রকাশ করেন।
মুহিত বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে দারিদ্র্য বিমোচনই আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা সব সময় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে চেষ্টা করছি। কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি এ চাহিদা বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তার সঙ্গে তাল রেখে আমরা বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য এবং সেবা সরবরাহ বাড়াতে সচেষ্ট থেকেছি। অবশেষে, আমরা ছয় হতে সাড়ে ছয় শতাংশের বলয় অতিক্রম করে চলতি অর্থবছরে ৭.০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করব বলে আশা করছি। এর ফলে মাথাপিছু আয় উন্নীত হবে এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে।
মুহিত বলেন, দারিদ্র্য, অসমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার, গড় আয়ুষ্কাল, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, শিক্ষা ইত্যাদি সামাজিক সূচকে আমাদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তিন লাথ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
বাড়ছে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা
আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ভাতাসহ সামাজিন সুরক্ষা বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত কয়েকটি বিষয় :
১. বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩১ লাখ ৫০ হাজারে এবং ভাতার হার ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা;
২. বিধবা স্বামী নিগৃহীতা, দুস্থ মহিলা ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা;
৩, ভিজিডি (দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন) কর্মসূচির উপকারভোগী দুস্থ মহিলার সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার বাড়িয়ে ১০ লাখে উন্নীত করা;
৪. মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িয়ে পাঁচ লাখে উন্নীত করা;
৫. দেশের সব পৌরসভায় কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মোট এক লাখ ৮০ হাজার ৩০০ জন দরিদ্র মাকে এ ভাতার আওতায় আনা;
৬. অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা;
৭. নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের তহবিলে আরো ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান;
৮. হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে তাদের বিশেষ ভাতা ৫০০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা;
৯. বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের ভাতা ৪০০ টাকা হতে বাড়িয়ে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা;
১০. চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ১০ কোটি টাকা হতে বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা;
১১. ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা হতে বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করা।
অর্থমন্ত্রী জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত সুবিধাভোগীদের ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি প্রদান করা হবে, যার মাধ্যমে দ্রুত ও সঠিক সময়ে ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।
আজ তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা এবং অনুন্নয়ন ব্যয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
জিপিডির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হারের (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেন তাতে তিনি প্রবৃদ্ধির এই আশা প্রকাশ করেন।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, এ বছর প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ শতাংশ। বিবিএসর সাময়িক হিসাব তুলে ধরে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে ৭ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তাই আগামী অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগের আকার ও বাস্তবায়ন আরো বাড়বে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন পে-স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন, যা ভোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।’
এসব বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
৩০ অক্টোবর কর দিবস
প্রতি বছর ৩০ অক্টোবর পালিত হবে কর দিবস। দিনটি করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। ওই দিন সরকারি ছুটির দিন হলে এর পরবর্তী কার্যদিবসে পালিত হবে কর দিবস।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ সালের জন্য করা বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে রিটার্ন জমার জন্য অপরিবর্তনীয় ডেডলাইন দিবস রয়েছে। আমি প্রস্তাব করছি যে, বাংলাদেশেও রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি অপরিবর্তনীয় ডেডলাইন থাকবে, যা কর দিবস নামে অভিহিত হবে। সাধারণভাবে ৩০ অক্টোবর হবে কর দিবস।
তবে ৩০ অক্টোবর সরকারি ছুটির দিন হলে কর দিবস হবে তার পরবর্তী কার্যদিবস। কর দিবস প্রবর্তনের ফলে দেশের কর পরিপালন সংস্কৃতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার জন্য রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু প্রতি বছরই করদাতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়। কখনো কখনো রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ একাধিকবার বর্ধিত হয়। করদাতাগণ প্রতি বছরই সময় বাড়বে বলে ধরে নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল থেকে বিরত থাকেন। এর ফলে কর নির্ধারণ ও রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম পিছিয়ে যায়।
অপরদিকে, এতে রিটার্ন জমার সর্বশেষ সময়সীমা সংক্রান্ত আইনি বিধানটিও গুরুত্ব হারাচ্ছে।