ওয়েছ খছরু: এই মুহূর্তে সিলেটের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, ‘হকার সমস্যা’। ঈদ সামনে রেখে এই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। রমজানের আগে সিলেট সিটি করপোরেশন হকার উচ্ছেদে অভিযান চালায়। ওই সময় মাত্র ১০ মিনিটে উচ্ছেদ করা হয় সিলেটের সুরমা পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার এলাকা পর্যন্ত।
কিন্তু সকালে অভিযান হলেও বিকালে ফের দখলে চলে যায় ফুটপাথ। আর সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে ঈদ পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছেন ভাসমান হকাররা। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সব কটি উপ-সড়ক পুরোটাই হকারদের দখলে। কয়েক হাজার হকার অবৈধ দখলে রেখেছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা। একই অবস্থা সিলেটের উত্তর সুরমায়।
প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে সিলেট নগরীর সুরমা মার্কেটের সামনে থেকে একদিকে ধোপাদিঘীরপাড়, অপরদিকে সুরমা মার্কেট থেকে চৌহাট্টা এয়ারপোর্ট রোড পর্যন্ত কয়েক হাজার হকার দখলে রেখেছে। এসব সড়কের প্রধান দুইপাশে রীতিমতো অস্থায়ী দোকান বানিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। সিলেটের জেলা পরিষদ, আদালতপাড়া, জেলা প্রশাসকের অফিস ও বাসভবন, এসপি অফিস, প্রধান ডাকঘরের সামনে পর্যন্তই কয়েক হাজার হকার। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে তারা টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ এনে ব্যবসা করছেন। স্বল্প পুঁজিতেই খোদ রাস্তা দখল করে ব্যবসা চালানোর কারণে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করে যারা অত্যাধুনিক মার্কেটে ব্যবসা করছেন তারা পড়েছেন বিপাকে।
আর ওদিকে, হকারলীগ নামে আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট রাজপথ থেকেই প্রতিদিন লোপাট করছে লাখ লাখ টাকা। মাত্র ২০ গজ ফুটপাতে হকার বসিয়ে ওই সব নেতারা মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশও আলাদাভাবে টাকা আদায় করছে। সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির এসআই নজরুল ইসলাম হচ্ছে কোতোয়ালি পুলিশের টাকার খনি।
নজরুল ফাঁড়ি এলাকা থেকে মাসে ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করে থাকেন। বন্দরবাজার এলাকার ছিনতাইকারী, পতিতা সর্দারসহ সবাই টাকা দেয় নজরুলকে। টাকার জোর বেশি থাকায় বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে সরছে না নজরুল। যখনই তাকে বদলির জন্য বড় কর্তারা উদ্যোগ নেন তখনই টাকা নিয়ে হাজির হয়ে যান নজরুল। বড় কর্তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার কথা ইতিমধ্যে বহুবার সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন নজরুল।
ফলে সিলেটের বন্দরবাজার এলাকার ফুটপাথ নিয়ন্ত্রণ করছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুলও। এ কারণে রমজানের আগে দুই দফা অভিযান চালালেও হকারমুক্ত হয়নি সিলেটের ফুটপাথ। নামমাত্র এসব অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের মধুবন ও হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, পুলিশ ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের কারণে ফুটপাথ দখলমুক্ত হচ্ছে না।
এদিকে, সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠ এখন পুরোটাই হকারদের দখলে। হকাররা দখল করে রেজিস্ট্রারি মাঠকে হকার মার্কেট হিসেবে গড়ে তুলেছেন। রমজানে এই মাঠ থেকে হকার উচ্ছেদ করতে গেলে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে হকার উচ্ছেদের এক দফা দাবি নিয়েই আন্দোলন গড়ে তোলেছিলেন সিলেটের দলিল লেখকরা। অবশেষে এতে হস্তক্ষেপ করলেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে ঈদ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে হকারদের এমনটি জানিয়েছেন সিলেটের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান সায়েক।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের হকার সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থমন্ত্রী আন্তরিক রয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা সিলেটের ফুটপাথ নিয়ে হকার রাজনীতি করছেন। ভোটের ফ্যাক্টর বলে মনে রাজনৈতিকভাবে কেউ অ্যাকশনে যাচ্ছেন না। আবার হকার উচ্ছেদে প্রশাসন আগ্রহী হয়ে উঠলে রাজপথে রাজনৈতিক ছায়ায় আন্দোলন গড়ে তোলা হয়।