কামাল মেহেদী: ১৯২৬ সালের এপ্রিলে জন্ম। ১৯৫২ সালে বৃটিশ সিংহাসনে আরোহন। প্রায় ৬৪ বছর ধরে বৃটিশ সিংহাসনে আসিন। দেখেছেন ডেভিড ক্যামরণসহ ১২ জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর শাসন। অন্যদিকে বারাক ওবামাসহ ১১ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শাসনও দেখেছেন তিনি। বৃটিশ ইতিহাসের সবচাইতে দীর্ঘতম রাণী হলেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
প্রশ্ন হচ্ছে কেনো রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ দুটি জন্মদিন পালন করেন? হুম, না। এখানে রাজনৈতিক কোনো বদ-মতলব নেই। নিত্যান্তই সুন্দর ও রোদেলা আবহাওয়ার মধ্যে বৃটিশ জনগণকে একটু আনন্দ উৎসব করার সুযোগ প্রদানই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। রাণীর মূল জন্মদিন হলো ১৯২৬ সালের ২১শে এপ্রিল। আর জুনে পালন করা হয় অফিসিয়াল জন্মদিন। ঠান্ডা উপেক্ষা করে রোদেলা আকাশের নীচে জন্মদিনের উৎসব পালনের সুযোগ করে দিতে বৃটিশ রাজ পরিবারের অফিসিয়াল জন্মদিন পালনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে সেই ১৭৪৮ সাল থেকে।
কিং সপ্তাম এডওয়ার্ড জন্ম গ্রহণ করেন ১৮৪১ সালের ৯ নভেম্বর। তিনি ১৯০১ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত রাজা ছিলেন। ঠান্ডা এবং তোষারের কারণে তিনি মে অথবা জুন মাসের মধ্যে কোনো এক সময় অফিসিয়াল জন্মদিন পালন করতেন। কিং পঞ্চম জর্জ পঞ্চম, সপ্তম এবং অষ্টম এডওয়ার্ডের আমলেও জুন মাসেই অফিসিয়াল জন্মদিন পালনের রেয়াজ ছিল। কিং জর্জ ষষ্ট অর্থাৎ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবার জন্ম দিন ছিল ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ। মূলত রাজা ষষ্ট জর্জ পুনরায় অফিসিয়াল জন্মদিন পালনের রেওয়াজ ফিরিয়ে আনেন। যা রাণী এখনো মেনে চলছেন।
অফিসিয়াল জন্মদিনের তারিখও মাঝে মাঝে পরিবর্তন করা হয়। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর অফিসিয়াল জন্মদিন জুন মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার পালন করতেন। একই দিনে তাঁর বাবাও তাঁর অফিসিয়াল জন্মদিন উদযাপন করতেন। তবে ১৯৫৯ সাল থেকে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এ তারিখের কিছুটা পরিবর্তন করেন। জুনের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে তিনি তা শনিবারে নিয়ে যান। রাণী চাইলে অফিসিয়াল জন্মদিন জুনের যে কোনো শনিবারে নিতে পারেন। এবার রাণীর অফিসিয়াল জন্ম দিনের উৎসব শুরু হয় শুক্রবার থেকে। একই দিন রাণীর স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৯৫ বছর পূর্ণ করেন।
শুক্রবার থেকে রোববার। ৩ দিনব্যাপি এবার উৎসব হয় রাণীর অফিসিয়াল জন্মদিনের। রোববার বৃষ্টিভেজা স্ট্রীট পার্টির মাধ্যমে শেষ হয় রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৩ দিনব্যাপি অফিসিয়াল জন্মদিন পার্টির। রোববার ব্যতিক্রমি স্ট্রীট পার্টি হয়েছে। দ্যা মলে অনুষ্ঠিত স্ট্রীট পার্টিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। এবারই প্রথম রাণীর জন্মদিনের স্ট্রীট পার্টিতে টিকেট কিনে অংশ নিয়েছেন সাধারণ মানুষ। টিকেটের দাম ছিল ১শ ৫০ পাউন্ড। রাণীর বড় নাতি পিটার ফিলিপস এ পার্টির আয়োজক। এ পার্টি থেকে উত্তোলিত সব অর্থ ইউকে ও কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশে রাণীর অর্থে পরিচালিত প্রায় ৬শ চ্যারিটি সংস্থাকে দান করা হবে। পার্টিতে রয়েল পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাণী ৯০ জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নেয়ার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
১২ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর শাসন দেখেছেন রাণী:
বৃটিশ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স ৯০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত এপ্রিলে। এরমধ্যে প্রায় ৬৪ বছর বৃটিশ রাণী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনো বহাল সিংহাসনে বহাল আছেন তিনি। ১৯৫২ সালে বৃটিশ সিংহাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এর মধ্যে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, ইডেন, কালাহান, ডগলাস হোম, উইলসন, হিথ, কালাহান, থেচার, মেজর, ব্লেয়ার, ব্রাউন এবং সর্বশেষ বর্তমানে ক্যামরুনের শাসনাম দেখছেন তিনি। স্যার সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মেয়ের বয়সী ছিলেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। আর মার্গারেট থেচারের বয়স রাণীর বয়সের চাইতে ৬ বছর বেশি ছিল। ডেভিড ক্যামরনের বয়স যখন ছোট বালক ছিলেন, যখন রাণী তাদের প্রাইভেট স্কুলে তাঁর এক আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন।
রাণী প্রতি সপ্তাহে একবার প্রধানমন্ত্রীদের ডেকে নিয়ে যান। সপ্তাহের সব কিছু প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জেনে নেন রাণী। এমনতি প্রধানমন্ত্রীর রেড বক্সে কি আছে সেটাও রাণীকে নিত্য দিনে আপডেট দিতে হয়। রাণীর সঙ্গে দেখা করার সময় অনেক আলাপ আলোচনা হয় রাষ্ট্রীয় এবং বিদেশী নীতি নিয়ে। কিন্তু আচ পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী তা বাইরে এসে কারো কাছে প্রকাশ করেননি। এটা প্রকাশ করার কোনো নিয়ম নেই। শুধু ১২ জন প্রধানমন্ত্রী নয়, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ সর্বমোট ১১জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের শাসনামলও দেখেছেন বৃটিশ রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।