আব্দুল হাই সন্জু: ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সিদ্ধান্ত হবে আগামী ২৩ জুন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে। ১৯৭৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের যোগদান করার দুই বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালেও একই প্রশ্নে গণভোট হয়েছিল। সেই গণভোটে ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ৬৭ শতাংশ ভোট পড়ে। ১৯৭৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করার আগে গণভোট অনুষ্ঠানের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল লেবার পার্টি। এবারও একই কারণে গণভোট হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে গণভোটের প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিল।
কনজারভেটিভ পার্টির আদর্শিক শূন্যতার সুযোগে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি ও নিজ দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমপির পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপের মুখে গণভোটের প্রতিশ্র“তি দেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমেরন। ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষের রাজনীতিবিদরা বলছেন, ইউনিয়নে যোগদান করার পর থেকে ব্রিটেনের নিজস্ব মতামত বাস্তবায়নের অধিকার হারিয়ে গেছে; ১৯৭৫ সালের পর থেকে ইউনিয়নের অভ্যন্তরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, ফলে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।
গণভোটকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি জনমত জরিপ হয়েছে। ভোটের দিনের আগে আরও কিছু মতামত জরিপের ফল পাওয়া যাবে। দিন যত যাচ্ছে মতামত জরিপের ফলাফল ততোটা স্পষ্ট হচ্ছে। তবে সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে বলা যায় যে ব্রিটেনের জনগণ ইউনিয়নে থাকা এবং না-থাকা নিয়ে কম-বেশী সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
১৯৭৫ সালের গণভোটের সময়ে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিতে যেমন ইউনিয়নবিরোধী এমপি ছিলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতেও প্রায় অর্ধেক সংখ্যক এমপি ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে চান। তৎকালীন কেবিনেটের ২৩ সসস্যের মধ্যে ৭ জন ছিলেন ইউনিয়নবিরোধী আর বর্তমান সরকারের ৫ জন কেবিনেট সদস্য ইউনিয়নবিরোধী।
তৎকালীন এমপ্লয়মেন্ট সেক্রেটারি মাইকেল ফুট ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার ক্যাম্পেইনের অন্যতম নেতা ছিলেন। বর্তমান সরকারেরও এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার প্রীতি প্যাটেল একই পথে হাঁটছেন। ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে সবচেয়ে জোরালো চাপ সৃষ্টি করেছে ইউকে ইন্ডিপন্ডেন্স পার্টি। গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে এই দলটি সারা দেশে ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে বেশ কয়েক জন লেবার এমপি এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির এমপিরাও রয়েছেন। যারা ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে চান, তাঁরা যুক্তি দেখিয়ে বলছেন যে ব্রিটেনকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছেনা ইউরোপীয় ইউনিয়ন; ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর মাত্রতিরিক্ত নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দিচ্ছে এবং সদস্য ফি বাবদ প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড নিলেও ফিরিয়ে দিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম। ‘লিভ’ (ইউনিয়নত্যাগী) ক্যাম্পেইনাররা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্রিটেনের পূর্ণ ক্ষমতা ফিরে পেতে চান এবং ব্রিটেনে বসবাসের জন্য কিংবা কাজের সন্ধানে আসা লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চান। ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যকার ‘ফ্রি মুভমেন্ট’ নিয়মের আওতায় ইউরোপকে ‘ইউনাইটেড স্টেইটস অব ইউরোপ’-এ পরিণত করা হচ্ছেও বলেও তাঁদের বিশ্বাস।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমেরন সম্প্রতি ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোর নেতাদের সাথে দরকষাকষি করে বেশ কয়েকটি ক্ষমতা ব্রিটেনের হাতে ফিরিয়ে এনেছেন। ফলে তিনি ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ‘রিমেইন’ ক্যাম্পেইনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই পক্ষের ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, ইউনিয়নের সদস্য হিশেবে থাকাটা ব্রিটেনের জন্য কল্যাণকর, কেননা এর ফলে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে পণ্য ও সেবা বিক্রয় করা সহজতর। ব্রিটেনে আসা ইমিগ্র্যান্টদের অধিকাংশ তরুণ বয়সের কর্মঠ লোক-এমন যুক্তি দেখিয়ে ‘রিমেইন’ ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, এদের কারণে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে এবং সরকারি সেবাখাত পরিচালনা করতে তাঁরা বরং সহায়তা করছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশের বিশাল এই ক্লাব ছেড়ে দিলে একাকী হয়ে ব্রিটেনের সার্বিক নিরাপত্তায় ঘাটতি দেখা দেওয়া সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ব্রিটেনের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন ইউনিয়নপন্থীরা।
দুই পক্ষের যুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে সাধারণ জনগণের সিংহভাগ বুঝে উঠতে পারছেন না যে ইউনিয়নে থাকলে ভালো হবে নাকি ছেড়ে দিলে দেশের ও দশের মঙ্গল হবে। দুই পক্ষই সত্য বলছেন, আবার পসিংখ্যানিক ভাষায় সত্য-মিথ্যা গুলিয়েও ক্যাম্পেইন করছেন। ফলে সাধারণ জনগণ পড়েছেন ধাঁধাঁর মধ্যে। তাঁরা রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনারদের কথায় পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না, আবার তাঁদের কথা ফেলেও দিতে পারছেন না। তবে যারা ইউনিয়ন থেকে ডিভোর্স চাইছেন তাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের জন্য অনুকূল পরিবেশ পেয়েছেন। কেননা গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে গণমাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কুফল ও ইমিগ্রেশনবিরোধী সেন্টিমেন্ট তুলে ধরে যে পরিমাণ প্রচার-প্রচারণা হয়েছে তার পুরো সুফলটাই ভোগ করছে ‘লিভ’ ক্যাম্পেইনাররা।
নিকট অতীতেও ‘রিমেইন’ ক্যাম্পেইনারা একই তাঁবুতে ছিল। পৃথক হওয়ার ফলে ‘রিমেইন’ ক্যাম্পেইনকে সফল করতে বাড়তি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন প্রধানমন্ত্রী কেমেরেন। কেননা, অল্প সময়ের মধ্যে দেশবাসীকে উল্টো স্রোতে নিয়ে আসা বেশ দূরুহ কাজ। উপরন্তু, ভোল পাল্টানোর ফলে জনগণও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছে না ‘রিমেইন’ ক্যাম্পেইনারদের। তাই নিজেদের শক্তির পুরোটা নিয়োগ করেছে সরকার। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সহ সরকারি মেশিনারিজকে ইউনিয়নপন্থী বক্তব্য তুলে ধরতে মাঠে মোতায়েন করা হয়েছে। গুটি কয়েক বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশই ইউনিয়নে থাকার পক্ষে। কেননা, এর ফলে তাঁরা এই অঞ্চলের যে কোনো স্থানে সহজেই টাকা-পয়সা, শ্রমশক্তি ও পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে স্থানান্তর করতে পারে। দেশের বাইরে থেকে এগিয়ে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো হাই-প্রফাইল ব্যাক্তিত্ব ও ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এর মতো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংগঠণ। তাঁরাও বলছেন, ইউনিয়নে থাকলেই ব্রিটেনের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
চতুর্মুখী তথ্যবন্যায় ভাসমান দিশেহারা জনগণের মনে এখন অনেক প্রশ্ন। চলুন বাছাইকৃত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই। উত্তরগুলো নেওয়া হয়েছে বিবিসি ওয়েবসাইট থেকে।
প্রশ্ন: ক্লাব সদস্য হওয়ার কারণে ই.ইউ কোষাগারে ব্রিটেনের কত অর্থ পরিশোধ করতে হয় এবং এই অর্থ থেকে কী পরিমাণ ব্রিটেনে ফিরে আসে?
উত্তর: সরকারের ট্রেজারি বিভাগের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৪/১৫ অর্থবছরে দেনা-পাওনার হিসাব শেষে ব্রিটেনকে দিতে হয়েছিল নেট ৮.৮ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০০৯/১০ অর্থ বছরের চেয়ে এই অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ। তবে ব্রিটেন একাই বেশী অর্থ জমা দেয়না। ২৮টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশ ইউনিয়নের কোষাগারে যে পরিমাণ অর্থ জমা দেয়, ফেরত পায় তার চেয়ে কম। ২০১৪/১৫ অর্থবছরে ক্লাবের জয়েন্ট একাউন্ট থেকে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছে পোল্যান্ড, এর পরেই রয়েছে হাঙ্গেরি ও গ্রীস। ব্রিটেনের বাড়তি আরো একটি সুবিধা তৈরী করে রেখে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচার। তাঁর দরকষাকষির ফলে বার্ষিক একটি রিবেইট ও মানিব্যাক সুবিধা পায় ব্রিটেন। ২০১৪/১৫ অর্থ বছরে এই ডিসকাউন্টের অঙ্ক ছিল ৪.৬ বিলিয়ন পাউন্ড। আঞ্চলিক উন্নয়ন ও কৃষকদের উন্নয়নে এই মঞ্জুরির অর্থ ব্যয় করা হয়।
প্রশ্ন: মাইগ্র্যান্টদের ছেলে-মেয়েদের চাইল্ড বেনিফিট ও ওয়েলফেয়ার নিয়মে সাম্প্রতিক পরিবর্তন আনার ফলে ব্রিটেনের কত অর্থ সাশ্রয় হবে?
উত্তর: এইচ এম রেভিনিউ এন্ড কাস্টমস এর হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার লোকের ৩৪ হাজার শিশুর জন্য চাউল্ড বেনিফিট পাঠানো হয় তাদের নিজ নিজ দেশে। এই খাতে ব্যয় হয় প্রায় ৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। তবে দেশের বাইরে চাউল্ড বেনিফিটের অর্থ পাঠানো একেবারে বন্ধ করতে না পারায় এই ব্যয় অব্যাহত থাকবে এবং এই অঙ্কও ওঠা-নামা করবে; কেননা একেক দেশের জীবন-যাত্রার ব্যয় একেক রকম। প্রধানমন্ত্রী কেমেরন বলেছেন, তাঁর সাম্প্রতিক দরকষাকষির ফলে ৪০ শতাংশ ইউরোপীয় মাইগ্র্যান্ট পরিবার বছরে গড়ে ৬ হাজার পাউন্ড ইন-ওয়ার্ক বেনিফিট হারাবে। ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার্ক এন্ড পেনশন্স বলছে, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে ১২৮ হাজার থেকে ১৫৫ হাজার মানুষের বেনিফিটে পরিবর্তন আসবে। তবে নতুন নিয়ম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। আর নতুন যারা আসবে তারা আসার সাথে সাথে কোনো ইন-ওয়ার্ক বেনিফিট বা ট্যাক্স ক্রেডিট পাবেনা। তবে ব্রিটেনে বসবাসের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে চার বছরের মধ্যে সব ধরণের বেনিফিটের জন্য যোগ্য হবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাইগ্র্যান্টরা।
প্রশ্ন: ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে ব্রিটেনে বাড়ি-ঘরের মূল্যে কী প্রভাব পড়বে?
উত্তর: এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ দুই পক্ষের ক্যাম্পেইনারদের কেউই বলছেন না যে ‘লিভ’ জয়যুক্ত হলে ইউরোপীয়ানদের বোঁচকা বেঁধে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বাড়ি-ঘরের দামের সাথে অন্যান্য বিষয়ও জড়িত। যেমন: সুদের হার এবং দেশের অর্থনীতির বিরাজমান অবস্থা ইত্যাদি। তবে ‘ব্রেক্সিট’ হলে বাড়ি-ঘরের সম্ভাব্য মূল্য কেমন হতে পারে-এই নিয়ে দুই পক্ষের ক্যাম্পেইনাররা পানি ঘোলা করেই যাচ্ছেন।
প্রশ্ন: ইউনিয়ন ছেড়ে দিলে ব্রিটেন ট্রান্সলান্টিক ট্রেইড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশীপ (টিটিআইপি) এর অংশ থাকবে কি?
উত্তর: টিটিআইপি বাস্তবায়নের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা এখনও চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে। এটি বাস্তবায়ন হলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ফ্রি টেইড এরিয়া’ গড়ে উঠবে। টিটিআইপি’র বড় বন্ধু প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমেরন। তিনি মনে করেন, এই অঞ্চল গড়ে উঠলে আমেরিকার পণ্য সস্তায় আমদানী করা যাবে এবং ব্রিটেন প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রফতানি বাজার পাবে। তবে লেবার নেতা জেরিমি করবিন সহ বামপন্থী অনেক রাজনীতিক আশঙ্কা করছেন, টিটিআইপি বাস্তবায়িত হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে অনেক ক্ষমতা চলে যাবে, সরকারের সেবাখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, খাদ্য সামগ্রীর মান নিম্ন হয়ে পড়বে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে। ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে টিটিআইপি এর অংশ হতে হবেনা ব্রিটেনকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটেন আলাদাভাবে বাণিজ্যিক সমঝোতা তৈরী করতে পারবে।
প্রশ্ন: ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে এনএইচএস এর উপর কী প্রভাব পড়বে?
উত্তর: হেলথ সেক্রেটারি জেরিমি হান্ট সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে এনএইচএস এর বাজেট কমাতে হবে, বিদেশী ডাক্তার ও নার্সরা চলে যেতে বাধ্য হবে। তবে ‘লিভ’ ক্যাম্পেইনাররা জেরিমি হান্টের বক্তব্যকে ‘জুজুর ভয়’ হিশাবে চিহ্নিত করে বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ফি বাবদ প্রদেয় অর্থ দেশের ভেতরে এইনএইচএস এর মতো সেবাখাতে ব্যয় করা যাবে। অন্যদিকে, লেবার পার্টির সাবেক হেলথ সেক্রেটারি লর্ড ওয়েন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্রান্সআটলান্টিক ট্রেইড এন্ড ইনভেস্টমেন্টে পার্টনারশীপ (টিটিআইপি) এর ফলে এনএইচএস আরও বেশী বেসরকারীকরণের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এনএইচএস-কে বেসরকারীকরণের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসা।
প্রশ্ন: ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে ব্রিটেন আবারও ইউনিয়নে যোগ দিতে পারবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, পারবে। তবে সবকিছু আবারও শুরু থেকে শুরু হবে। এ যাবত দরকষাকষি করে যত ধরণের রিবেইট ও ছাড় আদায় করা হয়েছে, সেগুলো কার্যকর থাকবেনা। লিসবন ট্রিটির ৪৯ ও ৫০ ধারায় এ সম্পর্কিত নির্দেশিকা দেওয়া আছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সদস্য হওয়ার আবেদন করতে হবে ব্রিটেনকে। তবে নতুন সদস্য দেশের জন্য ‘ইউরো’ কে কারেন্সী হিশাবে গ্রহণ করার শর্ত রয়েছে। তবে পাউন্ড স্টার্লিংকে কারেন্সী রাখার জন্য আবারও দরকষাকষিতে যেতে পারে ব্রিটেন।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকা প্রশ্নে চলমান প্রচারণা সর্বদলীয়ভাবে চললেও জনগণের দৃষ্টি পড়ে আছে মূলত: ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির দুই পক্ষের উপর। লেবার পার্টি এই ক্যাম্পেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলেও তারা উচ্চ কণ্ঠে আওয়াজ দিচ্ছে না। ফলে চলমান ক্যাম্পেইন কনজারভেটিভ পার্টির দুই পক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
এর ফলে গণভোটের ফল যাই হোক, তার ফসল ঘরে তুলবে ক্ষমতাসীন দলই। ক্যাম্পেইনকে বেগবান করতে দেশের ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠণকে দলে ভেড়াচ্ছে দুই পক্ষই। ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের সংগঠণ ‘বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন’ ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার জন্য ক্যাম্পেইন করছে।
এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার প্রীতি প্যাটেল তাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশ থেকে রেস্টুরেন্ট কর্মী আনার পথ সুগম হবে, যদিও প্রীতি প্যাটলের ওই বক্তব্যের ভিত্তি যথেষ্ট দূর্বল ও নড়বড়ে। উপরন্তু ‘লিভ’ ক্যাম্পেইনাররা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ব্রিটেনের জন্য ‘পয়েন্ট বেইস্ড’ ইমিগ্রেশন ব্যাবস্থা চালু করা হবে। এই ব্যবস্থায় দক্ষতার ভিত্তিতে যোগ্য লোককে বাছাই করা হয়। এটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড হওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে পৃথকভাবে লোক আনার পথ খোলা থাকবেনা। রেস্টুরেন্টের কাজে দক্ষ হলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও বাংলাদেশী দক্ষ শ্রমিক পয়েন্ট বেইস্ড ইমিগ্রেশনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
আসন্ন গণভোটের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে দীর্ঘমেয়াদে ব্রিটেনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত ব্রিটেনকে আমরা নিজের জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কেমন দেখতে চাই সেটি নির্ভর করবে ২৩ জুনের গণভোটে। ভোট প্রয়োগ করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করা সকলের ভোটারের কর্তব্য।