নিজাম উদ্দীন সালেহ: এক সময় সিলেট ছিলো একটি মহকুমা শহর। শহরের কেন্দ্রস্থলে কিছু অফিস আদালত এবং দোকানকোটা ছাড়া তেমন কোন বিল্ডিং মার্কেট ছিলো না এই মহকুমা শহরে। অবশ্য শহরের অলিগলিতে কিছু পাকা বাড়িঘর ছিলো। কিন্তু শুরু থেকেই সিলেট শহর পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠেছে, সম্প্রসারিত হয়েছে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত।
এর ফলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষভাবে রাস্তাঘাট রয়ে গেছে অপ্রশস্ত, ড্রেনেজ পানি সরবরাহ ও ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের কোন উন্নতি হয়নি। পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠার কারণে সিলেট নগরীতে এখন কোন সুষ্ঠু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ফলে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী যানজট সমস্যা। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে যানবাহন সংকট। আর এসব সমস্যা ও সংকটে নগরীর ৫ লক্ষাধিক বাসিন্দার জীবন এখন ওষ্ঠাগত।
দেখা যাচ্ছে, নগরীর অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তাসহ বিভিন্ন অলিগলির রাস্তা জরাজীর্ণ ও চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। খোদ বন্দরবাজারের রাস্তাগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত ও খাদ। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে গর্ত ও ভাঙ্গাস্থানে ইট পাথর কিংবা কিছু পীচ ঢেলে জোড়াতালির সংস্কার কার্য ছাড়া স্থায়ীভাবে এগুলো মেরামত করতে দেখা যাচ্ছে না। এতে পথচারী ও যানবাহনকে প্রতি মুহূর্তে হোঁচট খেতে খেতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
নগরীর জিন্দাবাজার ও এর আশপাশের রাস্তাগুলোও জরাজীর্ন হয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি রাস্তার অপ্রশস্থতা চলাচলে সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা। রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক ও টেলিফোনের খুঁটিগুলো এসব রাস্তা ও ফুটপাতকে অধিকতর সংকীর্ণ করে তুলেছে। সিলেট একটি বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চল। তাই দেখা গেছে, বৃষ্টিপাতের ফলে এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তায় যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়, তা বর্ষণে টিতে থাকতে পারে না। এছাড়া যথাযথভাবে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রন প্রয়োগ ও সংস্কার কাজ না করায় বর্ষাকালে সদ্য সংস্কারকৃত অনেক রাস্তাই ভেঙ্গে চুরে গর্তপূর্ণ হয়ে ওঠে।
অনেকের মতে, সিলেটের বিশেষভাবে নগরীর রাস্তাঘাট ও গলিপথ গুলো কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হলে বৃষ্টিতে এগুলো নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে না। নগরীর কেন্দ্রস্থল ছাড়াও রায়নগর এলাকায় এ ধরনের কংক্রিটের রাস্তা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা গেছে। আরিফুল হক চৌধুরী কাউন্সিলর থাকাকালে তিনি এ ধরনের রাস্তা তৈরী করেন, যা আজো যথেষ্ট মজবুত ও টেকসই অবস্থায় আছে। নগরীর রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কারের ক্ষেত্রে এ বিষয়টির উপর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
নগরীর রাস্তাঘাট ও ফুটপাত সদস্যা দূরীকরণ, যানজট নিরসন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ার অন্যতম বাধা হয়ে আছে বন্দরবাজারের মান্দাতা আমলের কিছু মার্কেট ও জেলা কারাগার। জেলা কারাগার বাদাঘাটে স্থানান্তরের কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। নগরীর বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যমান কারাগারটি সরিয়ে এখানে পরিকল্পিতভাবে ইমারত, স্থাপনা ও রাস্তা তৈরী করা হলে নগরীর সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হবে। হ্রাস পাবে যানজট। বন্দরবাজারের আরেকটি অপরিকল্পিত মার্কেট হচ্ছে হাসান মার্কেট।
এটাকে পরিকল্পিতভাবে পুনঃনির্মাণ করে নতুন রাস্তাঘাট তৈরী ও বিদ্যমান রাস্তাগুলোর সংস্কার সাধন করা হলে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে, এমন অভিমত নগরবাসীর। একইভাবে জল্লারপাড়, সিভিল হাসপাতাল, মেডিকেল কলোনী ইত্যাদি এলাকায়ও এ্ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যায়। এসব স্থানে বাইপাস সড়ক, ফ্লাইওভার এবং সম্ভব হলে বহুস্তর সড়ক নির্মাণ করে সিলেট নগরীর চেহারা পাল্টে দেয়া যেতে পারে।
এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাসেজ নির্মাণ করে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ড্রেনেজ ও ওয়াটার সাপ্লাই ব্যবস্থাও নগরবাসীর সুযোগ সুবিধাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এই রমজান মাসে এমনকি রমজান শুরুর আগে থেকেই নগরবাসী যানবাহন সংকটে অস্থির। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই পাওয়ার বাইক ও ব্যাটারী চালিত রিকশা বন্ধ করে দেয়ায় এ সমসা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
অথচ ঢাকা নগরীতেও ব্যাটারী চালিত রিকশা এখন চলতে দেখা যাচ্ছে। বার বার লেখালেখি সত্বেও নগরীতে সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত টাউন বাস সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একটি কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় নগরীতে এ ধরনের কৃত্রিম যানবাহন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
নগরবাসী এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে যান। রেহাই পেতে চান যানজট ও যানবাহন সংকট থেকে। তারা চান উন্মুক্ত ডাস্টবিনবিহীন একটি পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিত ও সুন্দর নগরী।