নিউজ ডেস্ক: চিজের প্রতি অন্ধ ভালবাসা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাদিয়া হোসেনের। সিলেটি পিতামাতার এই সন্তান দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অকপটে স্বীকার করেছেন তার শৈশবের সব কিছু।
তিনি বলেছেন, আমি বেড়ে উঠেছি লুটনে। আমাদেরকে সব সময়ই খাবার খেতে হতো মেঝেতে কাপড় বিছিয়ে তার ওপর। ছিল না টিভি দেখার অনুমতি। বাংলাদেশে (ডাইনিংয়ে) কোন চেয়ার ছিল না। আমার পিতা এই রীতি ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। এ জন্য কখনোই আমাদের ডাইনিং টেবিল ছিল না। ভাত ছিল আমাদের প্রধান খাদ্য। বাংলাদেশী রীতি অনুযায়ী প্রতি রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে থাকতো সাত বা আট রকমের তরকারি। আমরা গোল হয়ে খেতে বসতাম। গ্যাস হিটারটা আমার কাছাকাছি থাকতো তখন।
কারণ, আমি সব সময়ই ঠান্ডায় কাবু। দ্য গার্ডিয়ান তার ওই সাক্ষাতকারটি প্রকাশ করেছে ১৯শে জুন। এতে তিনি আরও অনেক কথা বলেছেন। বলেছেন, তার পিতার ছিল একটি ভারতীয় রেস্তোরা। এর শেফ ছিলেন তিনিই। কাজ শেষে সব সরঞ্জাম বাসায় নিয়ে যেতেন তার পিতা। তার মধ্যে ছিল গ্যাজেট, উইজেট ও মিক্সার তৈরি করার বড় সব মেশিন। তিনি তৈরি করতেন অ্যাঙ্গলিসাইজ কারি।
কিন্তু তার মা প্রথা অনুযায়ী রান্না করতেন সব সাধারণ খাবার। তার মা কখনো বেশি খাবার রান্না করতেন না, যদিও প্রতি শুক্রবার তার পিতা একটি আস্ত ভেড়া কিনে নিতেন। নাদিয়া বলেছেন, তার পিতা কাজ থেকে ফিরে তার মাকে সব কিছু যথাযথভাবে করতে সহায়তা করতেন। নাদিয়ার মাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলতেন, দেখ তুমি ঠিকমতো পিয়াজটা কাটতে পার নি।
জবাবে তার মা বলতেন, দেখ তাতে কিছু হবে না। আমি এতে কেয়ার করি না। আমি ৬টি সন্তানকে বড় করে তুলছি। নাদিয়া তার পিতামাতাকে চমৎকার একটি দম্পতি বলে উল্লেখ করেন। বলেন, তাদের মধ্যে মাঝে মধ্যে সব সময়ই থাকতো প্রতিযোগিতা। নাদিয়া বলেন, বেশির ভাগ গরমকালেই আমরা বাংলাদেশে যেতাম। সেখানে দাদাবাড়িতে অবস্থান করতাম। তখন আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ভরে যেত। দাদা দাদী, নানা নানীর নাতিপুতিদের ৬৭ জনের মধ্যে আমি একজন। সেকানে আমি একটি জিনিস লক্ষ্য করেছি। তাহলো, সেখানে অন্যরা যা খেত তার চেয়ে আমরা বেশি খেতাম। অন্যরা সামান্যই খেত।
কারণ, তাদের অনেক ছেলেমেয়ে। তারা কখনও জলখাবার কায় নি। আমাদের জন্য থাকতো বিস্কুট, চিপস, চকোলেট। অন্যদের জন্য তা থাকতো না। যতক্ষণ পর্যন্তু তারা গাছ থেকে একটি আম না পাবে ততক্ষণ তারা অন্য কিছু পেতো না খেতে, (ভাত ছাড়া)। বাংলাদেশে ডাইনিং নেই, চেয়ার নেই নাদিয়ার এমন বক্তব্যে সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
ফলে বিষয়টি নিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল, ডেইলি অ্যান্ড সানডে এক্সপ্রেস রিপোর্ট করেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই সাক্ষাতকারে নাদিয়া বলেছেন, বাংলাদেশে (ডাইনিংয়ে) কোন চেয়ার নেই। বাবা এই প্রথাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এ জন্য আমাদের কখনও ডাইনিং টেবিল ছিল না। তাছাড়া ডেজার্টের ধারনাটি বাংলাদেশী কুইজিনে নেই। চিজের প্রতি আমার অন্ধ ভক্তি রয়েছে। কিন্তু আমার মা কখনও তা কেনে নি।
কারণ, বাংলাদেশী কুইজিনে তা নেই। এর ফলে বাংলাদেশী বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ফেসবুকে নামিরা হোসেন নামে একজন জবাবে লিখেছেন, বাংলাদেশে অবশ্যই চেয়ার আছে। আছে ডেজার্ট। আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে আমরা চিজকে পনির বলে থাকি।
ফারাশা খান সাঈদ লিখেছেন, তার বিবৃতি বাংলাদেশকে ছোট করেছে। বাংলাদেশীদের ডেজার্ট আছে। এর মধ্যে রয়েছে দই, ফিরনি, নানা রকম মিষ্টি। আমাদের নিজস্ব ধরনের চিজ আছে। এগুলো সুইস চিজের মতোই। তিনি অবশ্যই তার নিজস্ব শৈশব নিয়ে কথা বলছেন।
ফারহানা রহমান নামে একজন নাদিয়া হোসেনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, কথা বলার আগে আপনাকে বাংলাদেশের কুইজিন নিয়ে কিছুটা গবেষণা করা উচিত। বাংলাদেশে নানা রকম ডেজার্ট আছে। অবশ্যই এখানকার মানুষের ডাইনিংয়ে চেয়ার আছে।