শীর্ষবিন্দু নিউজ: রাতভর বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের লালখানবাজারে পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষার শুরুতে পাকাঘর বা তাঁবুতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১৫ বছরের ঠিকানা সেমিপাকা ঘরটি ছাড়তে রাজি না হওয়াই কাল হল চট্টগ্রামের পোশাককর্মী ফাতেমা ও তার মেয়ের।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের এক পাশের মাটি নরম হয়ে সেহেরির পর ও ভোর ৫টার মধ্যে কোনো এক সময় নিচে ঘরের ওপর ধসে পড়ে। এতে ফাতেমা বেগম (৪২) ও তার মেয়ে কুলসুম আক্তার (১৭) মাটিচাপা পড়েন। নিহত ফাতেমা নগরীর ফকিরহাট এলাকায় ফোরএস গার্মেন্টে কাজ করতেন। ফাতেমার বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া গ্রামের খিলমেহের গ্রামে। নগরীর ফকিরহাট এলাকায় ফোরএস গার্মেন্টেসে কাজ করতেন মা-মেয়ে। ঘটনার সময় ফাতেমার স্বামী মান্নান বাসায় না থাকায় তিনি বেঁচে যান।
প্রতিবেশী শাহনাজ বেগম ফজরের আজানের পর ফাতেমার ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময়ই বিকট শব্দে পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। শাহনাজ জানান, পাহাড় ধসের শব্দে ফাতেমা জেগে ওঠে। তখন সেও বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। মেয়ে কুলসুম ছিল ঘুমন্ত। এরমধ্যেই ঘরের ওপর মাটি এসে পড়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই মাটিচাপায় ফাতেমা ও কুলসুম মারা যায়। পরে স্থানীয়রা ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি সরিয়ে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই এলাকাবাসী মাটির স্তূপ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার রাত ৯টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট ৬৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসাবে নগরীর ১২টি পাহাড়ে একহাজারের মতো পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এছাড়া পাহাড়গুলোর ঢালে বা আশেপাশে বসবাস করছে আরো ৫০ হাজারের মতো মানুষ। রেলওয়ে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা ও গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন এসব পাহাড়ের আশেপাশে বস্তি বা টিনশেড কলোনিতে এসব পরিবারের বসবাস। বিভিন্ন সময়ে এসব পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে সফল হয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি বছরই বর্ষায় পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গত বছর ১৭ জুন নগরীর আকবর শাহসহ তিনটি এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যায় ২০ জন। ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগারপাস এলাকার বাটালি হিলের রিটেইনিং দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আর ২০০৭ সালের ১১ জুন পাহাড় ধসে ১২৭ জন নিহত হন।
Leave a Reply