কোহিনুর জাহান সোমা : সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা সবকিছু মিলিয়ে মানুষের জীবন। আর এই ছোট জীবনটাতে অনেক ধরনের শখ, অনেক ধরনের ইচ্ছা থাকে যা কিনা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করি প্রতিদিন। আর সেই প্রতিদিনের মতো আরেকটা দিন আসে বছর ঘুরে সেটা হচ্ছে ঈদ। এই ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয় আমাদের আনন্দের বন্যা। আনন্দটাকে বাড়িয়ে দিতে চলে নানা আয়োজন। শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা।
এই ব্যস্ততা শুধু যে নিজেকে নিয়ে তা কিন্তু নয়, থাকে ঘরের ভিতর বাহিরে কিভাবে সৌন্দর্য বাড়ানো যায় তা নিয়েও মাথা ঘামাতে হয়। অবশ্য এই নিয়ে একেক জনের একেক ধরনের রুচি থাকে। আর এ থেকেই বোঝা যায় গৃহসজ্জার উপর কার কেমন সৌন্দর্যপ্রীতি বা সৌন্দর্যবোধ। ঈদ এলে যেন এমনটাই লক্ষ্য হয়ে উঠে সবার। ঈদে গৃহসজ্জাটা এমন হওয়া দরকার যেন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং তা সবার নজর কাড়ে। আপনি নিশ্চয়ই চান সবার প্রথমে নজরে আসুক আপনার প্রিয় শোবার ঘর, বসার ঘর, ডাইনিং রুম কিংবা আদরের বাচ্চার রঙিন ঘরটি?
ঈদকে সামনে রেখে আপনি নিজের ঘরকে সাজাতে পারেন নিজের মনের মতো করে। নানাভাবে সাজাতে পারেন ঘরের ভিতর ও বাহিরে। কিন্তু এ জন্য বাড়তি যে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে তা কিন্তু নয়। নিজের বুদ্ধি এবং অল্প কড়ি মিলালেই হয়ে যাবে সব। কিভাবে করবেন ঘরের সাজসজ্জা? আসুন, কিছু টিপস নেয়া যাক এখান থেকে: আপনি যখন ঘর সাজাতে যাবেন প্রথমে মনে রাখবেন ঘরের দেয়ালের রং ও তার চারপাশটার দিকে। ঘরের দেয়ালের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘর সাজালে সৌন্দর্য পায় ভিন্নমাত্রা।
এ জন্য আপনাকে সহায়তা নিতে হবে হরেক রকম জিনিসের। আপনি চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখতে পারেন সেগুলোর ওপর। সে ক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, সাজসজ্জার জিনিসগুলোর রঙ কোনভাবে যেন বেশি উজ্জ্বল না হয়। আর তা আপনার দেয়াল এবং ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্রের চেয়ে বেশি নয়। এবার আসুন কি সাজাবেন, কিভাবে সাজাবেনÑ তা দেখে নেয়া যাক। ঈদে আপনার শোবার ঘর, অতিথি কক্ষ, ডাইনিং বা খাবার ঘর ও অন্যান্য জায়গাগুলোকে সাজাতে পারেন বিভিন্ন রকমের জিনিস দিয়ে। ঈদের দিন আপনার শোবার ঘরটাকে সাজাতে পারেন একটু অন্যরকম করে। এই অন্য রকমটা আপনার ঘরকেই শুধু নয়, মনকেও রাঙাবে সমানভাবে।
আপনি ঈদের দিন বিছানায় রঙিন ছোট কিংবা বড় ফুলের চাদর বিছাতে পারেন। বিছানার পাশে ছোট একটা টেবিল রাখতে পারেন। সেই টেবিলের ওপর অবশ্যই ফুল সহকারে একটা ফুলদানি রাখতে পারেন। আর ফুলগুলো যদি কাঁচা রজনী গন্ধা বা গোলাপ দিয়ে সাজানো যায় তাহলে একটু চিন্তা করেন এতে ঘরের সৌন্দর্যটা আরও একটু বেড়ে যাবে। আর সেই ফুলদানিতে যদি পানি দেয়ার কোন সুযোগ থাকে, তাহলে সেটা তো মিস করা যাবে না। এতে করে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ হবে। জানালায় লাগাতে পারেন হালকা রঙের পর্দা। যেন আলো-বাতাস সহজে ঢুকতে পারে। এটি ঘরকে মোহনীয় দেখাবে।
তাছাড়া শোবার ঘরে একটা ছোট আলমারি রাখতে পারেন। আর তার পাশে একটা টিভির ট্রলি রাখা যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। এতে করে ঘরকে আরও সুন্দর দেখা যাবে। শোবার ঘরের পাশাপাশি আপনি অতিথি বসার কক্ষকেও সাজাতে পারেন একটু ভিন্ন সাজে। দু’পাশে সোফা সেট করতে পারেন। সোফার কাভারগুলো এমনভাবে সেট করতে হবে যেন ঘরের অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে মিলে থাকে। এছাড়া, সোফার কাভারের সঙ্গে মিল করে কুশনও ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া ডিজাইনসহ ফুলদানি, প্লাস্টিক ফুল, ছোট ছোট শোপিস, দেয়াল পেইটিং ওয়ালমেট ও আরও অনেক কিছু দিয়ে। অতিথির ঘরটাকে আরেকটা আকর্ষণীয় জিনিস দিয়ে সাজাতে পারেন। আর তা হলো পেইন্টিং। পেইন্টিংটা এমনভাবে করতে হবে যেন ঘরের সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এই কক্ষের সঙ্গে একটু মিল রেখে খাবার ঘরটাও সাজাতে পারেন। অবশ্য রান্নাঘর এই সব রুম থেকে একটু দূরে হবে। ডাইনিং টেবিলের ওপর নানান রকমের ক্লথ বিছাতে পারেন। দেয়ালে ফলের বিভিন্ন ডিজাইনের ছবি লাগাতে পারেন। টেবিলের পাশে ফ্রিজ সেট করতে পারেন।
এতে করে সবকিছু নিতে সুবিধা হবে। এছাড়া, ফ্রিজের ওপর বিভিন্ন ডিজাইনের ছোট ছোট শোপিস লাগাতে পারেন। তাতে করে সৌন্দর্য আরেকটু বেশি ফুটে উঠবে। এত গেল আপনার শোবার ঘর ও অতিথির রুমের ঘর সাজানোর কথা। আরেকটা আকর্ষণীয় ঘর সাজাতে হবে আর সেটা হচ্ছে আপনার সোনামণির রুমটা। ঈদে আপনার সোনামণির ঘরটা একটু ভিন্ন সাজে সাজাতে পারেন। বিছানাতে বিছাতে পারেন কার্টুনের চাদর। তার ওপর বিভিন্ন ধরনের পুতুল। দেয়ালে লাগাতে পারেন স্পাইডারম্যানের ছবি, ডরিমনের কার্টুন, আকাশ নক্ষত্রের চিত্র আর বিভিন্ন দেশের মানচিত্র। এতে করে সে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানতে পারবে।
এছাড়া তার প্রিয় জিনিসগুলো দিয়েও সাজিয়ে তুলতে পারেন। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার সোনামণির ঘরের দেয়ালের রংটা যেন উজ্জ্বল হয়। আর ঘরে যেন আলোর ব্যবস্থা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আলো যেন সহজে প্রবেশ করতে পারে সে জন্য পর্দাগুলো হালকা লাগাতে পারেন। দেখবেন এতে করে আপনার সোনামণির মন অনেক ভালো থাকবে ও ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে। ঘরের সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি ঈদে বাইরের সৌন্দর্য্যটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
ঈদের দিন সকালে ঘরের চারপাশ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ফুলের টব দিয়ে বারান্দা সাজাতে পারেন। অবশ্য লক্ষ্য রাখতে হবে ফুলের টবগুলো যেন পরিষ্কার থাকে। ময়লা-আবর্জনা থাকলে অসুখ-বিসুখ যে হবে না, তার নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। সুতরাং এ দিকটির প্রতি খেয়াল রাখবেন। আর এমনভাবে সাজাতে হবে যেন সবার নজরে পড়ে। ঘরের বাইর ও ভেতর যাই হোক না কেন, তাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যেন ঘরের সৌন্দর্য্য আরও মোহনীয় হয়ে ফুটে উঠে।
এতে করে ঘর না শুধু, মনের দিকটাও সুন্দর হয়ে উঠবে। তা যেমন ভাল লাগবে আপনার, ভাল লাগবে পরিবারের সবার। আর যারা বেড়াতে আসবেন আপনার ঘরে, তারা দেখতে পাবেন মনের মতো করে সাজানো ঘরটাকে। মনে রাখবেন, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।
Leave a Reply