স্বদেশ জুড়ে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, তিন মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসে দুই বছর থাকা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে এখন।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যারা ৩ মাস ক্ষমতায় থাকার কথা থাকলেও দুই বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে হবে। যারা বন্দুকের জোরে’ ক্ষমতা দখল করে, বিচারকের আসনে থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালায়, প্রভাবিত হয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে- এদেশে তাদেরে উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তি হয়নি বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় এক পট পরিবর্তনে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনা সমর্থন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ। তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই সরকার ক্ষমতায় থাকে দুই বছর। সে সময় দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও। শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ ধরনের দুর্নীতি রোধ না করে কেবল প্রান্তিক দুর্নীতি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা যাবে না। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে ‘পাবলিক সেটিসফেকশন উইথ কারেন্ট পুলিশিং প্র্যাকটিস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রশংসায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পুলিশ ৪০/৫০ বছর আগের মতো নয়। শিক্ষাগত যোগ্যতায়, আচরণে তারা এখন অনেক এগিয়ে। সম্প্রতি চামেলীবাগে স্ত্রীসহ এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় তাদের মেয়ের গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, কেন সে এ জাতীয় কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে, সেটিও ভেবে দেখতে হবে রাষ্ট্রকে। তিনি দেশের কারাগারগুলোকে শাস্তিকেন্দ্রের বদলে সংশোধনাগার হিসাবে গড়ে তোলা এবং এজন্য কারা কাঠামোর সংস্কারের ওপরও গুরুত্ব দেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, বর্তমানে পুলিশ একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের রূপ পেয়েছে। পুলিশের কাজ এমন এক পেশা যেখানে সব সময় হাততালি পাওয়া যায় না, পাশাপাশি গালিও খেতে হয়। কিন্তু সব সময়ই যদি পুলিশের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলে ‘বিড়ম্বনা’ তৈরি হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক সময় এতে পুলিশের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়। আর পুলিশ কাজ করার আগ্রহও হারিয়ে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস’ প্রোগ্রামের পরিচালক অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
অন্যদের মধ্যে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান, মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমানসহ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিরেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাদ’উদ্দিন।
Leave a Reply