শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩২

ঐশীর দেয়া খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা: আইন না মেনে রিমান্ডে শিশু গৃহকর্মী

ঐশীর দেয়া খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা: আইন না মেনে রিমান্ডে শিশু গৃহকর্মী

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শীর্ষবিন্দু নিউজ: সস্ত্রীক পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান হত্যার দায়ে গ্রেফতারকৃত মেয়ে ঐশী হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। সস্ত্রীক নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় শিশু গৃহকর্মীকে আইন না মেনেই রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাসায় বহিরাগত ঘাতক প্রবেশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। হত্যার আগে পুলিশ দম্পতিকে কফির সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে খঞ্জর (দুদিকে ধারালো অস্ত্র) ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে তার দুই ছেলে বন্ধু সরাসরি সহায়তা করেছে। তাদের অনেক আগেই বাসায় ঢুকিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তারা গাড়ি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু গোয়েন্দাদের তদন্ত ও চামেলীবাগের ওই বাসার রেজিস্ট্রার থেকে এ তথ্যের কোনো প্রমাণ মেলেনি। ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর বাবা তার রুমেই ঘুমাচ্ছিলেন। আর মা ও ছোট ভাই ঐহী মাস্টার বেডরুমে (বাবা মার শোবা ঘর) ঘুমাচ্ছিল। মাকে কোপ দেয়ার সময় তিনি জেগে ওঠেন। ঘুমের ঘোরে থাকায় বুঝে উঠতে পারেননি। এ সময় ঐহী জেগে ওঠায় তাকে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। হত্যার পর গৃহকর্মী সুমীর সহায়তায় বাবা-মার লাশ চাদর দিয়ে মুড়িয়ে তার রুমের বাথরুমে নিয়ে যায়।

গোয়েন্দারা বলছেন, ঐশী একেক সময় একেক কথা বলছে। তার কথা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে। মানসিকভাবে সে অনেকটা শক্ত। তবে কোনো প্রশ্নের উত্তর এড়াতে কৌশল হিসেবে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করে। ঐশীসহ তিনজনের রিমান্ডের প্রথম দিন চলছে। এ ঘটনায় আমরা ওই তিনজনসহ আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এদের মধ্যে ঐশীর বন্ধু-বান্ধবী, নিকটাত্মীয়, বাসার দারোয়ান, বাবার সহকর্মীরা রয়েছেন। ঐশীর ঘনিষ্ঠ আরেক বন্ধু পারভেজকেও ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ জানিয়েছে, ঐশীর সঙ্গে তার দুই মাস আগে পরিচয়। ঐশী মাদকাসক্ত ছিল। ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকও গ্রহণ করতো। সে মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার চেষ্টা করতো বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

গোয়েন্দা দেয়া তথ্য মতে, ঐশী শুধু হত্যার পরিকল্পনাই করেনি ঘটনার সঙ্গে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে সে ছাড়া আরও কতজন জড়িত ছিল তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১০টি ঘুমের বড়ি সে কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে তা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।ঐশীর ‘বয়স নিয়ে বিতর্ক’ প্রসঙ্গে পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, তার জন্ম তারিখের কোনো রেকর্ড এখনো পাইনি। তার পাসপোর্টও আমাদের কাছে আসেনি। তবে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঐশীর জন্ম ১৯৯৫ সালে।

এদিকে, পুলিশ দম্পতির লাশ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার চামেলীবাগের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটে মাহফুজুরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতো ১৫ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মী। এই জোড়াখুনের মামলায় মাহফুজুরের মেয়েসহ তিনজনকে আদালতের অনুমতি নিয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এদের একজন ওই গৃহকর্মী। এ মামলায় শিশুদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় শিশু আইন ১৯৭৪ এবং শিশু অধিকার আইন ২০১৩ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেন আইন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে পুলিশকন্যার বয়স বাড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের জেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে না জানিয়ে এবং বয়স যাচাই না করে একটি শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো শিশু অধিকার আইন ২০১৩-এর লঙ্ঘন। এই গৃহকর্মী শিশুটির রিমান্ড চেয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাটিও মানবাধিকার কমিশন কখনোই সমর্থন করে না বলেন তিনি।

ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিশু আইন ১৯৭৪-এর ১৩(২) ধারা অনুযায়ী কোনো শিশু অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাকে আটকের পর পুলিশ প্রথমে অভিযুক্তের বাবা-মাকে তা জানাবে। একই আইনের ৫০ ধারায় বলা হয়েছে, এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তাকে শিশুটির অপরাধের ব্যাপারে জানাবে পুলিশ। সে কর্মকর্তা শিশুটির অপরাধ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে কিশোর আদালতে এবং বিচার চলাকালে শিশুটির নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিশ্চিত করবে পুলিশ।প্রচলিত আদালতে নয়, শিশুটির বিচার হবে কিশোর আদালতে। কিন্তু গৃহকর্মীটির বিচারের ক্ষেত্রে শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি।

শিশুগৃহকর্মীকে রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন ঠিক মতো না মানার অভিযোগ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দারা হত্যার ঘটনায় এই গৃহকর্মীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশ আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে তাকে রিমান্ডে নেবার অনুমতি চাইলে আদালত সব আইন বিবেচনা করেই তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতেই গোয়েন্দা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলেও জানান পুলিশের এই মুখপাত্র।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024