শীর্ষবিন্দু নিউজ: আজ ভয়াল ৩১ আগষ্ট। ১৯৭১ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জের জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি ১২৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে পাকবাহিনী। তাই আজকের এই দিনটিকে শ্রীরামসি গনহত্যা দিবস বলা হয়ে থাকে।
পাকবাহিনী আজকের এই দিনে জ্বালিয়ে দেয় শ্রীরামসি গ্রামের ঘরবাড়ি। কাতারের পর কাতারে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে নিরীহ গ্রামবাসীকে। ৩১ আগষ্ট এর এ হত্যাকান্ড আজো জগন্নাথপুরের “শ্রীরামসি” সহ আশাপাশ এলাকার মানুষের মাঝে শিহরন জাগায়। কিন্তু গনহত্যার পর তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য আজোবধি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে নির্মিত হযনি আধুনিক কোন স্মৃতিস্তম্ভ। এলাকাবাসীর র্দীর্ঘদিনের দাবি একটি সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ এর পাশাপাশি বর্বর এ হত্যাকান্ডের সাথে সহায়তাকারিদের বিচারের কাঠগড়ায়দাড় করানো হোক । শ্রীরামসী বধ্যভুমি সংরক্ষণ কমিটি ৩১ আগষ্ট শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করবে।
১৯৭১ সালের ৩১ আগষ্ট সকাল ১০টার কয়েকটি নৌকাযোগে পাক সেনারা তাদের দোসর রাজাকার আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি বাজারে গিয়ে এলাকার মানুষদের ধরে এনে স্থানীয় শ্রীরামসি বিদ্যালয়ে জড়ো করার নির্দেশ দেয়। পাকবাহিনীর নির্দেশে দেশীয় রাজাকাররা এলাকার সচেতন, শিক্ষিত, অশিক্ষিত যুবকদের ডেকে একটি রুমে জড়ো করে হাত বেঁধে ফেলা হয়। পাক সেনারা তাদের হাত পা বেঁধে রুমের বাইরে নিয়ে আসে এবং একইভাবে পার্শ্ববর্তী পুকুর পাড়ে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার ১২৪ জনকে নিরপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। পাক সেনাদের গুলিতে এ সময় যারা আহত হয়ে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের উপর পুকুর পাড় থেকে গুলি ছুঁড়ে হত্যা কর হয়।
শুধু মাত্র বয়সে যারা খুবই বৃদ্ধ তাদের প্রায় অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দেয়। এ সময় নিষ্ঠুর এই হত্যাকান্ডে শহীদ হন ১২৪ জন । এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন শিক্ষক তহশীলদার, পোষ্ট মাষ্টার, ডাক পিয়ন, ইউপি সদস্য, ছাত্র যুবক, বৃদ্ধ, প্রবাসী ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। গুটি কয়েকজন পঙ্গু হয়ে আহত অবস্থায় বেঁচে যান। ঘাতকরা এই বর্বরোচিত হত্যকান্ডের পরও পূনরায় আবারো ঐ এলাকায় শুরু করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।এই গনহত্যা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি পাক সেনারা। শ্রীরামসি বাজারে কেরোসিন ছিটিয়ে প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ ঘরবাড়ি দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়। গুলির শব্দে ও আগুনের লেলিহান শিখা দেখে গ্রামবাসীরা আতংকে প্রানভযে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। জনশূণ্য অবস্থায়ও তারা গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়ে ফেলে। এক সময় গোটা গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে পড়ে। চারিদিকে মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় সপ্তাহ খানেক পর আস্তে আস্তে লোকজন গ্রামে এসে ৪/৫ টি করে মৃতদেহ একেক গর্তে কবর দেয়। এ দিনের হত্যাকান্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাক্রমে ৮জন বেঁচে যায়।
আর তাই শ্রীরামসিবাসী আজো সেই ভয়াল হত্যাকান্ডের কথা মনে করে আতঁকে ওঠেন। ইতিহাসের কলংকজনক ও জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের সংবাদ এ সময় বিবিসি থেকে প্রচার করে বিশ্ববাসীকে জানানো হয়। গনহত্যার স্মরণে স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রীরামসি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্থানীয় মুক্তি সংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট কর্তৃক একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত করা হলেও এতো বড় একটা গনহত্যার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখানে একটা স্মৃতিস্থম্ভ নির্মাণ করা হউক এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী। প্রতি বছর স্থানীয় ভাবে সেখানে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply