তামান্না মোমিন খান: দশম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে রোডম্যাপ তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং যেসব কাজে ঘাটতি রয়েছে তার মূল্যায়নে প্রস্তুতিমূলক কার্যাদির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার কমিশন সভায় নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক তালিকা উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন সূত্র।
এরই মধ্যে নির্বাচনী আইনের সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করেছে ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আরপিও সংশোধন করে ১৪ই আগস্টে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সীমানা পুনঃনির্ধারণের কাজ ও ভোটার তালিকা হাল নাগাদের কাজ শেষ হলেও ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে।
কমিশন সভার জন্য প্রস্তুত করা রোডম্যাপ মূল্যায়ন খসড়ায় বলা হয়েছে, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এখনও বেশ কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে। এসব কাজের মধ্যে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া, আচরণবিধিমালা ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা প্রণয়ন, মাঠ পর্যায়ে ভোটার তালিকা প্রেরণ, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, নির্বাচনী কার্যক্রমে ইউএনডিপি’র মাধ্যমে অর্থের সংস্থানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট মুদ্রণ, ইউএনডিপি’র এসইএমবি প্রকল্পের মাধ্যমে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালি-কলম, দেশীয় মালামালের মধ্যে স্ট্যাম্প প্যাড, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, অফিসিয়াল সিল, গালা ক্রয় ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। নির্বাচনী বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থের খাতভিত্তিক হার নির্ধারণ ও দফাওয়ারি বিভাজন তালিকার কাজ শেষ করেছে ইসি। প্রকল্প সহায়তা খাত সমূহ নির্ধারণ করে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে ইউএনডিপি কর্র্তৃক স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল লক, অমোচনীয় কালি-কলম ক্রয়ের আদেশ দিয়েছে ইসি। নির্বাচনে ব্যবহৃত সকল ফরম ও প্যাকেট ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মুদ্রণের আদেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে অমোচনীয় কালি-কলম এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল ক্রয়ের জন্য এস ই এম বি প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করেছে ইসির ক্রয় ও মুদ্রণ শাখা। ইউএনডিপিকে তফসিল ঘোষণার ৬০ দিন আগে কালি ও কলম সংগ্রহ এবং ৯০ দিন আগে ব্যালট বাক্স প্রদানের আদেশ দিয়েছে কমিশন। চাহিদা অনুযায়ী নতুন ব্যালট বাক্স দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য আগের সকল ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী করে তোলার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য হিসাব অনুযায়ী একটি খসড়া করেছে কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর ভোট কেন্দ্রের তালিকা সংখ্যা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী আরও বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে- সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস, হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রস্তুত, ছবিসহ ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ, নির্বাচনী বাজেটের খাতভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের তালিকা প্রস্তুত, বিভিন্ন মালামালের পরিমাণ নিরূপণ ও ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কমিশনের নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন- কমিশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের সচিব ড. মুহম্মদ সাদিক বলেন নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও অনেক কাজই বাকি রয়েছে। যেসব ঘাটতি রয়েছে তা নিরূপণ করে যথাসময়ে সম্পন্ন করতে নতুন ভাবে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। আশা করছি নির্বাচনের আগেই সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করতে পারবো। কমিশনের অনুমোদনের জন্য বিষয়টি কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। ২৭শে অক্টোবর থেকে ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে যেসব ঘাটতি রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। আর এসব ঘাটতি কাটিয়ে উঠতেই রোডম্যাপ অনুযায়ী কি কি কাজে এখনও পিছিয়ে রয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করেছে কমিশন।
Leave a Reply