শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: চলতি বছর হজ করতে এসে রোববার পর্যন্ত মোট ১৫ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতদের প্রত্যেকেই হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান বলে জানান মক্কা হজ মিশন সূত্র।
চলতি হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ৯০ হাজার দুইজন (গাইডসহ) বাংলাদেশি হজ পালন করবেন। বুধবার পর্যন্ত ১৪১টি (সৌদিয়া ৭৫, বিমান ৬৬) ফ্লাইটের মাধ্যমে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৬২৫ জন (গাইডসহ) সৌদি আরবে এসে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৫৫৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫০ হাজার ২২৯ জন এসে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন হজ মিশন সূত্র।
সূত্র আরো জানায়, মৃতদের মক্কা এবং মদিনায় দাফন হয়। এদিকে, হজ মিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (২০১২) হজ মৌসুমে বাংলাদেশি হাজির নিহতের সংখ্যা ছিল ১৭৩ জন। এর মধ্যে মক্কায় ১১৯ জন, মদিনায় ২৯ জন, জেদ্দায় ৭ জন ও মিনায় ১৮ জন (পুরুষ ১৫৩ জন, মহিলা ২০ জন), সরকারি ৭ জন, বেসরকারি ১৬৬ জন।
মক্কা হজ মিশন সূত্র জানায়, এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৯০ হাজার দুইজন (গাইডসহ) হাজির মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ঢাকার সৌদি দূতাবাস ৮৬ হাজার ৩৬৯ জনকে হজ ভিসা দিয়েছে। এদিকে, হজ মিশনের মেডিকেল টিম সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত (শুক্রবার) ৯ হাজার ৭২১ জন বাংলাদেশিকে চিকিৎসাপত্র প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ হাজার ২৮ জনকে মক্কায় এবং ৩ হাজার ৬৯৩ জন মদিনায়।
যারা মারা গেছেন, তারা হলেন-
কক্সবাজার সদর উপজেলার সাইদুর রহমানের স্ত্রী শাজাহান বেগম (৭০)। তার পাসপোর্ট নং AF0146349। তিনি বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে মদিনার আল আন্সার হাসপাতালে মারা যান। শাজাহান বেগম আল শাফা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যম হজ পালনের উদ্দেশে সৌদিতে আসেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার নাজমুন (৯২)। তার পাসপোর্ট নং- AF8353448। নাজমুন বৃহস্পতিবার মক্কার আল হেরা হাসপাতালে মারা যান। তিনি নেপচুন এয়ার ইন্টা. এর মাধ্যমে হজ পালনের জন্য ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব আসেন।
বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার মোহাম্মদ কোরবান আলী প্রামাণিক (৮০)। তার পাসপোর্ট নং- AF1323365। তিনি রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে মক্কায় মারা যান। কোরবান আলী সিটি নিওন ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজ করতে সৌদি আরব এসেছিলেন।
চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ মকবুল হোসাইন (৭৫)। তার পাসপোর্ট নং-AF7120489। তিনি রোববার সকালে মক্কায় মারা গেছেন। মকবুল হোসেন উত্তরণ ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজ পালন করতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ১২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মোছাম্মত আফরোজা বেগম। পাসপোর্ট নং- AF6230648।
গাইবান্ধা উপজেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মোহাম্মদ হামিদুর রহমান মন্ডল (৫৭)। তার পাসপোর্ট নং- AG7008887। তিনি শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মক্কায় মারা যান। মাইদুর রহমান এ বছর আইরোড্রুম বাংলাদেশ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব আসেন।
নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার মোহাম্মদ মজিবর সরদার (৭০)। তার পাসপোর্ট নং- AE7793518। তিনি শুক্রবার মক্কার নুর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মজিবর সরদার জান্নাতুল কুলুদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব আসেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন (৭৭)। পাসপোর্ট নং- AF1084349।
রংপুর জেলার জেলায় গঙ্গাচড়া উপজেলার আবুল কালাম আজাদ (৫০)। তার পাসপোর্ট নং- OC1039025। তিনি মঙ্গলবার মক্কার জাহের হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
আবুল কালাম আজাদ মাবরুর এয়ার ট্রাভেলসের মাধ্যমে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব আসেন।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শরশের আলী কাজীর ছেলে মোহাম্মদ আফসার আলী কাজী (৬৭)। তার পাসপোর্ট নং AF0601758। নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার ইলিম ফকির (৭১), পাসপোর্ট নং- AF0297483।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মৃত রহমত উল্লার ছেলে জুলফিকার আলী (৫৭)। পাসপোর্ট নং- W0478362। মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, পাসপোর্ট নং- AC4484998।
শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার আবু হানিফা। পাসপোর্ট নং- AF2971758।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রামদীয়া গ্রামের রহিমুদ্দিন শিকদারের ছেলে মোহাম্মদ শওকত হোসাইন (৬৪)। পাসপোর্ট নং- AF2054893।
সূত্রটি আরো জানায়, এ বছর প্রথমবারের মতো হজ মেডিকেল অফিসে টাচ স্ক্রিন কিওস্কের মাধ্যমে হজযাত্রীদের ছবিসহ ট্রিটমেন্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। হজযাত্রীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পদ্ধতিটির ব্যবহার করে নিজেরাই নিজেদের কার্ড তৈরি করে নিচ্ছেন। দৃশ্যত পদ্ধতিটি হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে, মক্কা হজ মিশন সূত্র জানায়, শুক্রবার পর্যন্ত মক্কা, মদিনা এবং জেদ্দা আইটি ডেস্ক থেকে ১৭ হাজার ১৬৭ জন বাংলাদেশি হজ যাত্রীকে তথ্যসেবা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, সরকারি ব্যবস্থাপনার হজ গাইড ও আইটি টিমের সদস্যদের সমন্বিত একটি দল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো মিনা-আরাফা ও মুজদালেফায় হজ-পূর্ব অনুশীলন ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা মিনা ও আরাফায় তাঁবুর অবস্থান ও রেল-স্টেশনে যাতায়াতের রাস্তা সরেজমিন প্রদক্ষিণ করেন।