শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৪

অঘোষিত জরুরি অবস্থা: র‌্যাব-পুলিশে সতর্কতা, বিজিবি চেয়ে চিঠি

অঘোষিত জরুরি অবস্থা: র‌্যাব-পুলিশে সতর্কতা, বিজিবি চেয়ে চিঠি

সমঝোতার প্রচেষ্টা, প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব। তবে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে উল্টো আলামত। ঢাকার পর সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো চট্টগ্রাম ও বরিশালেও। আজ থেকে কার্যকর হবে এ নিষেধাজ্ঞা। দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতেও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা হবে শিগগিরই। এ যেন এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পাকড়াও অভিযান। রাজধানীর পল্টনে অভিযান চলেছে জামায়াত-শিবির অফিসে। প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ দলীয় জোটের কয়েকজন কর্মীকে। অভিযান চলেছে ঢাকার আরও কয়েকটি স্থানে। মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আহসান উল্লাহ হাসানকে। দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় চলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান। বিরোধীদলের শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ অভিযানে। যে কোন মূহর্তে মোতায়েন করা হবে বিজিবি।

র‌্যাব পুলিশে সতর্কতা, বিজিবি চেয়ে চিঠি

স্টাফ রিপোর্টার নূরুজ্জামান জানান, ২৫শে অক্টোবর ঘিরে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ১৮দলীয় জোট নেতাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গতকালও ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধী দলের সম্ভাব্য সমাবেশ কিংবা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি সরকারদলীয় সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে সহায়ক শক্তি হিসেবে মাঠে নামানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের। গতকাল পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে পুলিশ সতর্ক। সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোন মহল বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছে। ককটেল, গান পাউডার ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এর আলামত হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। গণগ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়মিত মামলার আসামিরাই গ্রেপ্তার হচ্ছে। এর বাইরে বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করার তথ্য তার কাছে জানা নেই।

সূত্র মতে, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসাবাড়ির আশেপাশে ছদ্মবেশী গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় নেতাকর্মীদের যোগাযোগের ওপর তীক্ষ্ন নজরদারি শুরু হয়েছে। গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও জেলাভিত্তিক বিরোধীদলীয় নেতাদের তালিকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি হানা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বাসা ও অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এর আগে সাদেক হোসেন খোকার বাড়িতে অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সর্বশক্তি ও বিভিন্ন কৌশল নিয়ে মাঠে থাকবে। কাজেই ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশ নিয়ে সরকার ও জনগণ মোটেই আতঙ্কিত নয়। সমাবেশের নামে কোন মহল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপতৎপরতা শুরু করলে জনগণই তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেবে। সূত্র মতে, ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের নামে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাকড়াও করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্রামগঞ্জের নেতাকর্মীদের মনে ভীতি সঞ্চারের জন্যই এ কৌশলে এগোচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সূত্র জানায়, কৌশলের প্রথম ধাপ হিসেবে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০শে অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজধানীতে যে কোন ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। শান্তিশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বজায় রাখার কথা বলে বিরোধী ১৮দলীয় জোটের মহাসমাবেশ ভণ্ডুলের টার্গেট নিয়ে সরকারের নির্দেশে পুলিশের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে।

গোয়েন্দারা জানান, ঢাকার বাইরে থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী ঢাকার সমাবেশে জমায়েতের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ মহাসমাবেশ ভণ্ডুল করতে না পারলে হেফাজতে ইসলামের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের সাংগঠনিক সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ কারণে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে নেতাকর্মীদের তটস্থ রাখা হবে। এছাড়া সমাবেশে যোগদানকারী নেতাকর্মীদের নিরুৎসাহিত করতে ঢাকাসহ সারা দেশে বিরোধীদলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বাড়ি ও কার্যালয়ে অভিযান চালানো হবে। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অফিসগুলোর সামনে পুলিশ পাহারা বসানো হবে, যাতে নেতাকর্মীরা ভিড়তে না পারেন। পাশাপাশি সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশনা দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

এতেও কাজ না হলে ২৪শে অক্টোবর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। সূত্র আরও জানায়, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল কিংবা জমায়েতের চেষ্টা করলে গুলি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ ও টিয়ার সেল সরবরাহ শুরু হয়েছে।

ঢাকায় থাকবে ২৬ হাজার পুলিশ সদস্য: ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিএমপির ২৬ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ২৫শে  অক্টোবরের ১৮দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গানপাউডার ও ককটেলসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করেছে।

আগে থেকেই গোয়েন্দার কাছে তথ্য আছে, সমাবেশে নাশকতা ঘটাতে পারে ১৮ দল। এ সমাবেশ সফল করতে দা-কুড়াল বল্লম জড়ো করার কথাও বলা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, সম্পদ রক্ষা, সরকারি স্থাপনা রক্ষা করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। ডিএমপির যে জনবল আছে তা দিয়ে যে কোন পরিস্থিতিতে জনশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা হবে।

২০ জেলা থেকে বিজিবি চেয়ে চিঠি: এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছেন। ২৪শে অক্টোবর থেকেই বিজিবি মোতায়েন চেয়েছেন তারা। জামায়াত অধ্যুষিত জেলার ডিসিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন চেয়েছেন। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২০টি জেলার ডিসি বিজিবি মোতায়েন চেয়ে চিঠি পাঠান।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডিসিদের চিঠির ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিজিবি মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছে। জেলা শহরগুলোর পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতেও চলছে বিজিবি মোতায়েন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মাঠে নামানো হবে।

চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান চট্টগ্রাম মহানগরীতে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

অন্যদিকে আগামী ২৫শে অক্টোবর চট্টগ্রামের রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। আর তাদেরকে প্রতিহত করতে ভোর থেকেই দলবলে হাজির হবে আওয়ামী লীগ। দুই দলের এমন ঘোষণায় ২০ পয়েন্টে মাঠে নেমেছে পুলিশ। চালানো হচ্ছে তল্লাশি। মোড়ে মোড়ে থামানো হচ্ছে গাড়ি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সন্দেহভাজনদের। ২৫শে অক্টোবরকে ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে শহরজুড়ে।

সরজমিন দেখা গেছে, নগরীর শাহ আমানত সেতু, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন ও সিটিগেট এলাকায় গাড়ি থামিয়ে কোন ধরনের ককটেল কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র গাড়িতে আছে কিনা সেই বিষয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন পুলিশ সদস্যরা। নগর বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবন ও জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত চকবাজার এলাকায় বেড়েছে গোয়েন্দা সংস্থাদের আনাগোনা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, নিরাপত্তা জোরদার করা নগরীর পয়েন্টগুলো হচ্ছে- বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে, কাজির দেউড়ি, ওয়াসা, একে খান মোড়, প্রবর্তক  মোড়, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং মোড়, অক্সিজেন, টাইগার পাস, চকবাজার, বহদ্দারহাট মোড়, সিইপিজেড মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো। প্রতিটি মোড়ে ২০ জন করে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। টহল জোরদার করার পাশাপাশি বিএনপি নেতাদেরকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ২৫শে অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘিতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ায় নতুনভাবে সংঘাতের আশংকা করছেন সাধারণ লোকজন।

তাদের ধারণা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায়। তাই এখন থেকে সতর্কাবস্থা নিতে হবে।  ইতিমধ্যে নগরীর ১৬ থানায় পুলিশকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়। নিয়মিত ফোর্সের পাশাপাশি শহরের স্পর্শকাতর জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি রিজার্ভ পুলিশ। অপরাধ সংঘটিত এলাকাগুলোতে বাড়ানো হয়েছে টহলদারি।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে চট্টগ্রামের রাজপথে মাঠে থাকবে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আর তাদেরকে ঠেকাবে আওয়ামী লীগ। লালদীঘি মাঠে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দুই দলই। সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে নগর পুলিশকে গত ১৩ই অক্টোবর একটি চিঠি দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। তবে এখন পর্যন্ত চিঠির কোন জবাব পাননি বিএনপি নেতারা।

পাল্টাপাল্টি এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পত্রিকা অফিসে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আগামী ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭শে অক্টোবর লালদীঘির মাঠে সমাবেশ আহ্বান করেছে। একইভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথিত বিরোধী দলের দা-কুড়াল, বোমাবাজি ও দেশব্যাপী সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে একই স্থানে ২৪শে অক্টোবর থেকে ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত জনসভা আহ্বান করেছে। দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের একই স্থানে কর্মসূচি ঘোষণার প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনাসহ জনমনে আতঙ্ক ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য ১৯৭৮ সালের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশ ২৯, ৩০, ৩৩ ও ৩৪-এর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে আমি মো. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, জননিরাপত্তা ও মহানগরবাসীর সার্বিক জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে ‘সমগ্র চট্টগ্রাম মহানগর’ এলাকায়  যে কোন সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, মানব বন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠান, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল, তীর-বর্শা, দা-কুড়াল, আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাইক্রোফোন, লাউড স্পিকার ইত্যাদি বহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।  এই আদেশ আগামী ২৪শে অক্টোবর ২০১৩ সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, ‘লালদীঘি মাঠের সমাবেশকে ঘিরে কিছু রাজনৈতিক দল একই দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে নগরবাসীর মনে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনাকাঙিক্ষত কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’

বরিশালে সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানায়, বরিশালে আগামী ২৫শে অক্টোবর জনসভা আহ্বান করেছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই স্থানে একই সময় এই জনসভার আহ্বান করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশ প্রশাসন আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নগরীর শান্তি বজায় রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা বলে জানিয়েছেন বিএমপি কমিশনার।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, ২৫শে অক্টোবর সকাল ১০টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে পৃথক জনসভার ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ওই স্থানে জনসভার অনুমতি চেয়ে উভয় দলের পক্ষ থেকেই লিখিত আবেদন করা হয়েছে। মহানগর বিএনপির পক্ষে প্রথম যুুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার এবং মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আফজালুল করিম আবেদন করেছেন।

অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, একই স্থানে দুই দল জনসভা করলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এর ফলে নগরীর শান্তি বিনষ্ট হবে এবং জনগণের যানমাল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। তাই জনগণের শান্তি বজায় রাখতে এবং জনগণের যানমাল রক্ষার্থে কোন দলকেই জনসভার অনুমতি দেয়া হবে না। আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে নগরীতে সকল সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় দলকে এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ যদি নগরীতে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে তা প্রতিহত করা হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার শামসুদ্দিন।

এদিকে যে কোন মূল্যে জনসভা করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, যতই বাধা আসুক না কেন ২৫শে অক্টোবরের জনসভা সফল করা হবে। জনসভা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইতিমধ্যে পুলিশের অনুমতি ও সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের (বিএনপির) জনসভা বাঞ্চাল করার জন্য পাল্টা জনসভার ডাক দিয়েছে।

এ ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, ২৫শে অক্টোবর সকাল ১০টায় অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরের জনসভা আওয়ামী  লীগের পূর্ব ঘোষিত। জনসভার অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। বিএনপি ওই দিন একই স্থানে একই সময়ে জনসভা ডেকেছে কিনা তা তার জানা নেই বলে জানান এডভোকেট আফজাল।

সারা দেশে মুখোমুখি দুই জোট

সারাদেশে রাজপথ দখলে রাখার প্রস্তুতি দুই জোটে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘোষণায় উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দুই জোট। প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে পাল্টাপাল্টি। জেলায় জেলায় কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি তারা। সন্দেহ-সংশয়, অজানা আতঙ্ক চারদিকে।

এ পরিস্থিতিতে গত রোববার সকাল থেকে রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ১৮ দল। একই পরিস্থিতি রাজধানীর বাইরের জেলা শহরগুলোতেও। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে উভয় জোট। রাজপথ দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্য জেলা শহরগুলোতে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চলছে রণপ্রস্তুতি। টানটান উত্তেজনায় রয়েছে উভয় জোটের নেতাকর্মীরা। দুই জোটের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

রংপুরে উত্তেজনা স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ কর্মসূচিতে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্‌ফর হোসেন। তিনি বলেন, যদি আওয়ামী লীগ কিংবা প্রশাসন বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিলে সংঘর্ষ ঘটবে। এ অপ্রীতিকর ঘটনার সকল দায়িত্ব তাদেরকে বহন করতে হবে।

#তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী রংপুরে ভোট কেন্দ্র সংগ্রাম কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পৃথক পৃথক আলোচনা হয়েছে। এ সংগ্রাম কমিটি গঠনে বিএনপিসহ ১৮ জোটের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ তাদের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে ২৫শে অক্টোবরে রংপুরে বিএনপির কর্মসূচি প্রতিহত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, বিএনপির আন্দোলনের নামে অরাজকতা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না। জনগণকে নিয়ে রংপুরের বুকে তাদের প্রতিহত করা হবে।

বগুড়ায় রাজপথে থাকবে উভয় জোট

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরকে ঘিরে বগুড়ায় ১৮ দল ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে চায় বগুড়ায়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগও মাঠে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সহিংসতা এড়াতে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য চাওয়া হয়েছে। বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব, অতিরিক্ত পুলিশ আর্ম ব্যাটালিয়ান শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন থাকবে।

এছাড়াও টহলের বহরের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সহিংস ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অনেকেই বলছে, বগুড়ায় বিএনপির ঘাঁটি হলেও রাজপথের লড়াই সংগ্রামে জামায়াত-শিবির মারমুখো অবস্থানে থাকে। ইতিপূর্বে বগুড়ায় তার প্রমাণও রয়েছে। তাই ১৮ দলের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের অবস্থানের ওপর পুলিশ কড়া নজরদারি করছে।

কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুখোমুখি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরকে ঘিরে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি আজ  দুপুরে সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীদের সমন্বয়ে এক সভা আহ্বান করেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি তাসভিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উলিপুর উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভা থেকে ঘোষণা করা হবে পরবর্তী কর্মসূচি। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগ সকল ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করতে মাঠে অবস্থান করবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, আওয়ামী লীগ সবসময় মাঠে আছে, মাঠে থাকবে। সেদিনও থাকবে।  আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। জনগণের জানমালের ক্ষতি করে এমন ধরনের কোন কাজ করতে না পারে সেজন্য প্রটেকশন দেয়া হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’দলই মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়ায় শহরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

কুমিল্লায় সংগ্রাম কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরকে ঘিরে কুমিল্লার সর্বত্র বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে সাধারণ জনগণ। এরই মধ্যে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙা করতে কুমিল্লা উত্তর এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের শরিক দলের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সংগ্রাম কমিটি। রাজপথে ১৮ দলকে প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে মহাজোটও।

এদিকে যে কোন নাশকতা প্রতিরোধে জেলা পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  এরই মধ্যে কুমিল্লা উত্তর এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে পৃথকভাবে ‘সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ১৮ দলের অন্যতম শরিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে নির্বাচন প্রতিরোধে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

হবিগঞ্জে সংগ্রাম কমিটি গঠন স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, আগামী ২৫শে অক্টোবরকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের ৬২৪টি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠন প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।  এছাড়া ২৫শে অক্টোবর কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক হবিগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

এদিকে ২৬শে অক্টোবর বিকাল ৩টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সকল অঙ্গ সংগঠনের সমন্বয়ে যৌথসভা ও সভা শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

খুলনায় রাজপথ দখলে করতে চায় উভয় জোট স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরকে সামনে রেখে খুলনাজুড়ে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২৪ ও ২৫শে অক্টোবর দলীয় কার্যালয় চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে, নীরবে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে খুলনা মহানগর বিএনপি। ঈদের ছুটির রেশ কাটতে না কাটতেই জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের। বৈঠক করে যুবদল ও ছাত্রদলকে থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটের নেতাদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৫টি থানায় পৃথকভাবে গঠন করা হয়েছে সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নগরীর ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রে পৃথক কমিটি করার।

গত রোববার পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে প্রায় শতাধিক কেন্দ্রে কমিটি গঠনের কাজ। নগর বিএনপির একাধিক সূত্র এগুলো নিশ্চিত করেছে। বসে নেই ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী। তাদের নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক ছুটি বাতিল করে মহানগরীতে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে। আর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে র‌্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। বিএনপি নেতারা জানান, কেন্দ্র ঘোষিত যে কোন কর্মসূচি খুলনায় যাতে কঠোরভাবে পালন করা হয় সেজন্য দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সে অনুযায়ী কাজও করছেন তারা।

উত্তপ্ত কিশোরগঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটা উত্তপ্ত। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।  চলছে সভা-সমাবেশ, পরিকল্পনা ও সংগ্রাম কমিটির গঠনের তোড়জোড়। তবে পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার এড়াতে এসবই চলছে অনেকটা গোপনে, আড়ালে-আবডালে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক স্থবিরতা বিরাজ করায় এ ইস্যুতে দলটির নেতাকর্মীদের সে রকম কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ১৮ দলীয় জোটের সহিংস ও ধ্বংসাত্মক যে কোন কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

বাধা এলে প্রতিরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ২৫শে অক্টোবরের সমাবেশকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোন মূল্যে তারা ওই দিনের কর্মসূচি সফল করে দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি, আগামী ২৫শে অক্টোবরের পর দেশে কয়েকদিনের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলা ও ঢাকায় লোক সমাগমের দু’রকমের টার্গেট নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। ঢাকায় বসবাসরত জেলার দলীয় নেতাকর্মীদের সেখান থেকেই সমাবেশে অংশগ্রহণ ও জেলা থেকেও দলীয় নেতাকর্মীরা আগেই ঢাকায় পৌঁছে স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নেবেন। আর যারা ঢাকায় যেতে পারবেন না তারা এলাকায় অবস্থান নিয়ে কাজ করে যাবেন। আর কেন্দ্র থেকে তাৎক্ষণিক কোন কর্মসূচি দেয়া হলে তারা তা সফল করবেন।

এ নিয়ে কোন বাধা এলে তা প্রতিরোধ করা হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল হাই এ তথ্য জানান। এদিকে কেন্দ্র থেকে কোন দিকনির্দেশনা না থাকায় জেলা আওয়ামী লীগ বিএনপির এ কর্মসূচিতে কোন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না বলে জানা গেছে।

নোয়াখালীতে হার্ডলাইনে দুই জোট

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীতে ১৮ দলের সংগ্রাম কমিটি গঠন চলছে। প্রতিরোধের পরিকল্পনা নিয়েছে  আওয়ামী লীগও। দু’দলই হার্ডলাইনে। গতকাল আগামী ২৫শে অক্টোবর ১৮শে দলের সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে নোয়াখালীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কামরানের মতবিনিময় সভা নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীর উকিল লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রের সাংঘর্ষিক স্রোত তৃণমূলে পর্যায়ে বিশেষ করে নোয়াখালীর জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। নোয়াখালী জেলায় ৫১ সদস্য বিশিষ্ট্য সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঈদের একদিন আগে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহানের বাসভবনে এক জরুরি বৈঠকে এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে বসে নেই আওয়ামী লীগও। প্রতিরোধে তারাও সোচ্চার আছেন। জেলা সদর আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী সবাইকে প্রস্তুত হয়ে ১৮ দলকে প্রতিরোধ করতে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজধানীতে বিএনপি নেতাসহ ৬ জন গ্রেপ্তার ঢাকা সিটি করপোরেশনের  ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ও পল্লবী থানা বিএনপির আহ্বায়ক আহসানউল্লাহ হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার সহযোগী আলাউদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, গত ১৮ই জুলাই আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। ওই মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিরপুর থানার ওসি সালেহ উদ্দিন খান বলেন, গতকাল বিকাল তিনটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন এলাকা থেকে আহসানউল্লাহ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অন্যদিকে আগাম জামিন নিতে এসে হাইকোর্টের প্রধান গেটের সামনে থেকে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের সমর্থক ৫ বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে, গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় হাইকোর্টের প্রবেশ গেটের সামনে থেকে আউয়াল, কবির, রফিক ও ইয়াছিনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। শাহবাগ থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুরের একটি মামলার ঘটনায় তারা হাইকোর্টে আগাম জামিন ছিলেন।  র‌্যাব-৩ তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।

ওদিকে বিকালে রাজধানীর পল্টন থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম পুরানা পল্টনে জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এ সময় ওই অফিস থেকে এনামুল হক (২৪) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। সে শিবির কর্মী বলে পুলিশ জানায়। পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান শেষ হয় বিকাল সোয়া পাঁচটায়।

সৌজন্য: মানবজমিন




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025