সিলেটে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) দিনভর আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল থাকায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমেছে। পানি কমায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন আর কেউ কেউ বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এতে স্বস্তি দেখা দিয়েছে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের টানা তিন দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে কুশিয়ারা তীরবর্তী জনপদ জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
এখনও প্লাবিত এলাকার রাস্তাঘাট ডুবন্ত রয়েছে এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানির নিচে রয়েছে। তবে সুরমা তীরবর্তী জনপদ গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। এসব উপজেলায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বন্যার্তরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
সিলেট বিভাগে টানা তিন দিন ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া অন্য কমবেশি ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে সরকারি সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ১৩ উপজেলায় ১০১টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ১ হাজার ১১৬টি গ্রামের ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৫৭ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলার ৬৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৩৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৩টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে এই দুই নদীর ৩টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লোভা, সারি ও ডাউকি নদীর পানিও কমেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হয়নি। সুরমা নদীর পানি কমেছে। কুশিয়ারায় পানিও কমছে। এছাড়া
সিলেটে নদীগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় উজানের পানি ধীর গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান বন্যায় সিলেটের ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মেরামতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে বন্যার পানি পুরোপুরি না নামলে এসব বাঁধের কাজ করা যাবে না।
এদিকে আজ সোমবার (৮ জুলাই) আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা দেশের সব বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় সিলেটসহ দেশের চার বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এই পাঁচ দিন বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে এবং তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
Leave a Reply