যুক্তরাষ্ট্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ আক্রান্ত। সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে উৎকণ্ঠায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শহুরে জীবনে আধুনিক জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে যোগ হয়েছে অনিয়ম, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা। আর, দীর্ঘদিন এ ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্তরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ ঝুঁকিতে থাকেন। অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা, প্রথমেই তা নির্ণয় করাটা সবচেয়ে জরুরি।
কারণ, ডায়াবেটিসের সঙ্গে চোখ, কিডনি, থাইরয়েড প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, এ অঙ্গসমূহ আংশিক বা পুরোপুরি অচল হয়ে যেতে পারে। আপনি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা, তা জানতে নিচের ১০টি লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন:
১) অসাড়তা: হাত, পা, আঙুল ও পায়ের পাতায় যদি সামান্যতম অসাড়তা বা আড়ষ্টতা অনুভূত হয়, তবে সতর্ক হয়ে যান। এর কারণ রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলে, হাত-পায়ে অসাড়তা বোধ হতে পারে। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণসমূহের মধ্যে এটি একটি।
২) ঘন ঘন মূত্রত্যাগ: সাধারণভাবে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নিয়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন ডায়াবেটিস রোগীরা। অতিরিক্ত মূত্রত্যাগের ফলে শরীর মারাত্মকভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়ে।
৩) ওজন কমে যাওয়া: দ্রুত ও ব্যাখ্যাতীতভাবে ওজন কমে যেতে পারে। কারণ, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে, শরীর ঠিকমতো গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে না।
৪) ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া: হঠাৎ ওজন কমার সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষুধাও বেড়ে যায়। এ বিষয়টাকে অনেকে শাপে বর মনে করে নিজের ইচ্ছেমতো খাওয়া শুরু করে দেন। কিন্তু, এতে যে শরীরের কোষসমূহ প্রয়োজনীয় শক্তি হারাচ্ছে, সেটা বুঝতে পারেন না রোগী।
৫) ঝাপসা দেখা: টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে সচরাচর এমনটা ঘটে। যদি সময় মতো ডায়াবেটিস রয়েছে কিনা, তা নির্ণয় করা না যায় ও চিকিৎসা করানো না হয়, সেক্ষেত্রে রোগী পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।
৬) শুষ্ক ও খসখসে চামড়া: ডায়াবেটিসে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ প্রক্রিয়া আক্রান্ত হলে, আমাদের ত্বকের ঘাম-গ্রন্থি কর্মক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। ফলে ত্বকে চুলকানির অনুভূতি হয়, শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়।
৭) অবর্ণনীয় অবসাদগ্রস্ততা: শরীর অবসাদ বা অবসন্নতায় ভেঙে পড়তে পারে। কাজের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উদ্যম ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
৮) পিপাসার্ত বোধ: প্রচুর পানি পানের পরও পিপাসার্ত বোধ হওয়া। ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গসমূহের মধ্যে এটি একটি।
৯) কাটাছেঁড়া বা ক্ষত উপশমে দেরি হওয়া: সামান্য কাটাছেঁড়া বা ক্ষত খুব ধীরে ধীরে উপশম হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হওয়ার এটিও একটি লক্ষণ।
১০) মাঢ়ির প্রদাহ: টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সাধারণত মাঢ়ির প্রদাহ দেখা দিতে পারে। মাঢ়ি ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া, অস্বস্তি বা যন্ত্রণা অনুভূত হওয়া মাঢ়ির প্রদাহের লক্ষণ। এক পর্যায়ে তা মাঢ়ির রোগে পরিণত হয়।