রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩০

সিলেটে গ্রেফতার আতংকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা

সিলেটে গ্রেফতার আতংকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও  শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এই পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার-আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা।

নেতাদের পাশাপাশি তাঁদের কাছের অনুসারীরাও মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন কর্মীরা। অনেকেই রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।

সরকার পতনের পর থেকে সিলেটে এখন পর্যন্ত ৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোতে সিলেট আওয়মী লীগের শীর্ষনেতারাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন। এছাড়াও বিশ্বনাথ একটি ও বিয়ানীবাজারে ২টি মামলা দায়ের হয়েছে।

মামলাগুলোতে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও  সিলেটের তিন এমপিসহ প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন দুই হাজারের মতো। তবে এসব মামলায় সিলেটের কোন নেতা বা অভিযুক্ত পুলিশকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে ৪ আগস্ট মহানগরের আম্বরখানা ও সাপ্লাই এলাকায় ছাত্র-জনতার অভিযোগে  সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ইলক্ট্রিক সাপ্লাই (কলবাখানি) ব্লক-এ এর জালালী-৬১ নং বাসার বাসিন্দা খোরশেদ আলম (৩০)।

মামলায় তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। আরও আসামি করেছন অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে।

একই দিন ৪ আগস্ট মহানগরের সোবহানীঘাট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংঠনের নেতাকর্মীদের হামলা-গুলিবর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে  সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন সেনপাড়া এলাকার জুবেল আহমদ স্বপন নামে এক যুবক। তিনি ওই হামলায় আহত বলে এজাহারে দাবি করেছেন।

মামলার এজাহারে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্র্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. জাকির হোসেন খানসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০/৪০০ জনকে।

বুধবার (২১ আগস্ট ) ছাত্রদল নেতার দায়ের করা মামলায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী ও প্রধানন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মতো প্রভাবশালী নেতাদের আসামি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিনা সরকার পতনের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৮ জুলাই সন্ধ্যায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে পড়ে মারা যান  সিলেটের  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্র রুদ্র সেন (২২। এ ঘটনায় সোমবার (১৯ আগস্ট) সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন আন্দোলনের শাবিপ্রবি সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম।

এ মামলায় মামলায় সাবেক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেটের তিন সাবেক এমপিসহ ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২০০-২৫০ জনকে।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, শাবিপ্রবি ভিসি ফরিদ উদ্দিন, মৌলভীবাজারের সাবেক সাংসদ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ রনজিৎ সরকার, সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

এছাড়াও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীর, জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু খালেদ মো. মামুন, সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাশ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ এবং দুজন এসআই ও ৫ জন কনস্টেবল।

একইদিন আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেটে পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহতের ঘটনার নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। শুনানি শেষে মামলার এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলায় ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান।

অন্য আসামিরা হলেন- সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি ‍রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে।

এছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের পিআরও সাজলু লস্কর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, নগরের চালিবন্দর নেহার মঞ্জিলের বাসিন্দা শিবলু আহমদ (মো. রুহুল আমিন), এসএমপির কনস্টেবল সেলিম মিয়া, আজহার ও ফিরোজ।

সিলেট মহানগরীর সোবাহানিঘাট এলাকায় বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের মিছিলে হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাজন আহমদ সাজু  সিলেটের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেনের আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান, গোয়েন্দা বিভাগের উপ কমিশনার তাহিয়াত আহমদ চৌধুরী, সিআরটি বিভাগের প্রধান শাহরিয়ার আল মামুন, অতিরিক্ত উপ কমিশনার সাদেক কাওসার দস্তগীর, এসআই পলাশ চন্দ্র দাস, উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, এসআই সাইদুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামীকে আসামী রাখা হয়েছে।

এছাড়া সিসিক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।

সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ শোভন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু,  এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি দিলোয়ার হোসেন রাহি, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, মহানগর ছাত্ররীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহমদ আল কবিরসহ অজ্ঞাতনামা আর ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট ) সিলেট জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ (৩৫) সিলেট মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট ১ম ও দ্রুত বিচারিক আদালতে ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৫০০-৬০০ জন অজ্ঞাত লোককে আসামি করা হয়েছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024