আজ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। বিশ্ব মুসলিমদের তীর্থভূমি পবিত্র মক্কায় ২০২৫ সালের হজের মৌসুম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সৌদি আরবের সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতি বছর হজ শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজের ৮ তারিখ এবং চলে ১৩ তারিখ পর্যন্ত। সেই অনুযায়ী সৌদি আরবে আজ বুধবার (০৪ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে এবারের পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।
গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের হজ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল রাবিয়া বলেছেন, এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সৌদি আরবের স্থানীয় হজযাত্রীরা।
পবিত্র মক্কায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় হজযাত্রীরা আজ সমবেত হচ্ছেন তাঁবুর শহর মিনায়। সেখানে সারাদিন ও রাত অতিবাহিত করবেন তাঁবুতে। ইবাদত বন্দেগি করবেন। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
এ সময় তাদের কণ্ঠে একই সঙ্গে উচ্চারিত হবে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারিকা লাক’। অর্থাৎ- ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’ দু’টুকরো কাপড়ে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় তাদের স্রোত ছুটে যাবে পবিত্র আরাফাতের ময়দানে।
এই ময়দানেই আরাফাত পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি ও রীতিকে লালন করেন বিশ্বের সমস্ত মুসলিম। তারই ধারাবাহিকতায় হজযাত্রীরা ছুটে যাবেন আরাফাতের ময়দানে।
এদিন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মুসলিম রোজা পালন করেন। এ বছর আরাফাতের দিন ৫ই জুন, বৃহস্পতিবার। মূলত এদিনটিকেই মূল হজ হিসেবে ধরা হয়। এর পরদিন ৬ই জুন সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত বছর হজ করেছেন কমপক্ষে ১৮ লাখ হাজী। ২০২৪ সালে হজের সময় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। কমপক্ষে ১৩০০ হাজী মারা যান। এবারও হজের সময় সৌদি আরবে গ্রীষ্মকাল। এবারও তাপমাত্রা চরমে পৌঁছে যেতে পারে।
হজ উপলক্ষে নিরাপত্তা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, বিশ্বের ৭১টি দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩১৪টি ফ্লাইটে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।
হজযাত্রীদের পরিবহনের জন্য এবারও চালু হচ্ছে ‘আল মাশায়ের আল মুগাদ্দাসা’ মেট্রো সার্ভিস, যা ‘স্যাক্রেড সাইটস ট্রেন লাইন’ নামেও পরিচিত। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ট্রেনটি হজের সাত দিনে ৪৯০০ বার চলাচল করবে, যার মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রীকে আরামদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত সেবা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে ৭৪০০ কিলোমিটার সড়ক স্ক্যানিং, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং যানবাহন পরিদর্শন করা হচ্ছে। হজযাত্রীদের পরিবহনের জন্য অন্তত ২৫ হাজার বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেগুলোও প্রযুক্তিগত তদারকির আওতায় থাকবে।
পরিবহন ও লজিস্টিক সার্ভিস বিভাগের মুখপাত্র সালেহ আল জাওয়াইদ জানান, হারামাইন হাইস্পিড রেলওয়ের ট্রিপ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে হজ চলাকালীন যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে মক্কা, মদিনা ও পবিত্র স্থানগুলোতে ৪জি ও ৫জি নেটওয়ার্ক কভারেজ ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে স্থাপন করা হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ ওয়াইফাই পয়েন্ট।
সবমিলিয়ে প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের পবিত্র হজ।
Leave a Reply