শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ভারতের দিল্লি রাজ্যে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল দেশটির রাজনীতিতে বিকল্প শক্তির উত্থানের আভাস দিচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনীতির চিরচেনা ঘূর্ণাবর্তে যুগ যুগ ধরে পাক খাওয়া ভোটারদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাও প্রতিফলিত হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৪ ডিসেম্বর ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়। এর মধ্যে গতকাল রোববার দিল্লি, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড় রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়। সব কটিতেই কংগ্রেসের বিপর্যয় হয়েছে। মিজোরাম রাজ্যের ভোট গণনা চলছে।
এই নির্বাচনে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে। সেখানে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। উত্থান ঘটেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির (এএপি)। দীর্ঘ ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকা শীলা দীক্ষিতকে নয়াদিল্লি কেন্দ্রে ২২ হাজার ভোটে পরাজিত করেন এএপির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় এএপি ২৮টি আসন পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ৩২ ও কংগ্রেস আটটি আসন। স্বতন্ত্র থেকে জিতেছেন দুজন। সরকার গড়তে প্রয়োজন ৩৬ আসন। স্বতন্ত্র বিধায়কদের নিয়ে বিজেপির সরকার গড়ার সম্ভাবনাও নেই।
এএপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার গড়তে তারা কারও সমর্থন নেবে না, কাউকে সমর্থনও দেবে না। তাই বোঝা যাচ্ছে যে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসন আসবে। আর তা হলে, আগামী বছর লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভারও ভোট হবে। মাত্র নয় মাস আগে আন্না হাজারের আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেজরিওয়াল এএপি গড়ে দিল্লি বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এএপির লক্ষ্য ছিল, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন এবং জনগণের সামনে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা।
নির্বাচনী প্রচারণায় পরিবর্তনের সূচনা ঘটায় এএপি। দিল্লির প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার জন্য আলাদা ইশতেহার দেয় দলটি। ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ার নতুন সংস্কৃতি চালু করেন এএপির প্রার্থীরা। দলের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিনা পারিশ্রমিকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। নির্বাচনী তহবিলের বিষয়ে নিশ্চিত করা হয় স্বচ্ছতা। নির্বাচনের ফলাফল এটাই প্রমাণ করে, কংগ্রেস ও বিজেপির প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ। দল দুটির দুর্নীতি ও পেশিশক্তির রাজনীতি থেকে মানুষ মুক্তি চায়। পরিবর্তনের জন্য তারা উন্মুখ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দিল্লি দিয়ে শুরু হলো। একসময় ভারতের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে এএপি। এমনকি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা দলটি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি।