মোর্শেদ নোমান |
আকর্ষণীয় এসব প্যাভিলিয়ন আর অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হয় বিশাল অঙ্কের টাকা। ছবি: মনিরুল আলমস্থায়ী অবকাঠামো না হওয়ায় বাণিজ্য মেলায় প্রতিবছর অপচয় হচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বাণিজ্য মেলার জন্য ২০০৭ সালে জমি বরাদ্দ হওয়ার ছয় বছর পরও নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখনো বাণিজ্য মেলার স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
১৯৯৫ সাল থেকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবার চলছে মেলার ১৯তম আসর। এবারের মেলায় ৯৬টি প্যাভিলিয়ন, ৪৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ৩১৬টি স্টল, ১০টি রেস্তোরাঁ এবং তিনটি মা ও শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন এবং স্টল নির্মাণে অনেক বড় অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয় বলে জানালেন মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি মেলার মাঠের উন্নয়নকাজ এবং নানা স্থাপনা তৈরিতে ইপিবিকেও বড় অঙ্কের ব্যয় করতে হয়।
এসব ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছরই মেলার এক মাস আগে থেকে মেলা মাঠে অবকাঠামোর নির্মাণ শুরু করে বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এক মাসের মেলা শেষে অবকাঠামোগুলো বিক্রি করে দিতে হয় কম দামেই। অনেক সময়ই মেলার পুরোনো এসব অবকাঠামো বিক্রি নিয়ে চাঁদাবাজ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। সে কারণে শুরু থেকেই ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাণিজ্য মেলার জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের।বাণিজ্য মেলায় আকর্ষণীয় একটি প্যাভিলিয়ন। ছবি: মনিরুল আলম
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছরই মেলার অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবসায়ী ও সরকারের অপচয় হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেলার জন্য স্থায়ী জায়গার বিষয়ে সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কিছুই হচ্ছে না।’ তিনি মনে করেন, পরিবেশ ভালো না থাকায় বিদেশি ক্রেতা-উদ্যোক্তারাও মেলার প্রতি সেভাবে আকৃষ্ট হচ্ছেন না।
প্রথম দিকে আগারগাঁওয়ে স্থায়ী বাণিজ্য মেলা কমপ্লেক্স নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা থাকলেও ২০০৭ সালে পূর্বাচলে ১০ একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসে চীন। কিন্তু মন্ত্রণালয় আর ইপিবির মধ্যে চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ থাকে বিষয়টি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চীনের প্রতিশ্রুত অর্থ কাজে লাগানো যায়নি।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যকেন্দ্রও তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয়ভাবে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইপিবির সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ঠিক করা হয় ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এখনো নির্মাণকাজই শুরু করা যায়নি।
এ বিষয়ে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, প্রকল্পের নকশা এবং লে-আউট চূড়ান্ত হয়েছে। চীনের বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গেছেন। প্রকল্প-সংক্রান্ত চীনের প্রস্তাব, নকশাসহ সবকিছুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয় ও চীন সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। ইপিবির চেয়ারম্যান জানান, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে শিগগির কাজ শুরু হবে। আর কাজ শুরু হলে দেড় বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।