শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৬:১৯

সিপিডির পর্যালোচনা প্রতিবেদন: সহিংসতায় ক্ষতি ৪৯ হাজার কোটি টাকা

সিপিডির পর্যালোচনা প্রতিবেদন: সহিংসতায় ক্ষতি ৪৯ হাজার কোটি টাকা

শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক সহিংসতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থনীতিতে ৪৯ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পর্যালোচনা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

শনিবার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা ক্ষতির এই হিসাব তুলে ধরেছে সিপিডি। এছাড়া অর্থবছর শেষে দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতায় অর্থনীতির চার খাতে মোট ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা মোট দেশজ আয়ের চার দশমিক ৭ শতাংশ। এই সময়ে দেশে ৫৫ দিন হরতাল ও অবরোধ পালিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ অর্থনীতি-২০১৩-১৪ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছর শেষে দেশে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, এবার বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশের কম হবে না। যদিও ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা আছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে চার খাতের আর্থিক ক্ষতির যে হিসাব সিপিডি তুলে ধরেছে, তাতে রেল ও সড়ক যোগাযোগ খাতে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি; ১৬ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাকি তিন খাতের মধ্যে কৃষি ও কৃষিজাত শিল্প খাতে ১৫ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী বস্ত্রশিল্পে ১৩ হাজার ৭৫০ কোটি এবং পর্যটন খাতে দুই হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, পরিচালক (সংলাপ ও যোগাযোগ) আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রত্যাশা ও অর্থনীতির শক্তির ভিত্তিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি হারিয়ে গেছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির সেই ধারা ফিরিয়ে আনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেদনে স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সিপিডির পক্ষ থেকে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এগুলো হল- সরকারের আয়-ব্যয়ের কাঠামো দ্রুত ও বাস্তবতার ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণ করা, বোরো চাষ ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রণোদনা প্রদান, রপ্তানিমুখী শিল্পসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় যেসব শিল্প লোকসানে পড়েছে সেগুলোকে সহায়তা এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নীতি অনিশ্চতয়তা দূর করা। বিনিয়োগ বাড়াতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংস্থাটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক সহিংসতায় শিল্প, অর্থনীতি ও সেবা খাতের কর্মকাণ্ডের শ্লথ গতির কারণে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি বছর ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরলেও প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একারণে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না উল্লেখ করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বছরের বাকি সাত মাসে প্রায় ৩১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটাতে হবে, যা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।

সিপিডির মতে, রাজস্ব আদায় কমার পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ও হ্রাস পেয়েছে। আর তাই সরকারের আয়-ব্যয় কাঠামোটি বাস্তবতার ভিত্তিতে দ্রুত পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় ও এবছর সমাপ্য প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আউশ ও আমনের প্রবৃদ্ধিকে সন্তোষজনক উল্লেখ করলেও বোরোতে প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি। কিছুটা বিলম্বে শুরু হওয়া বোরো বপন বা রোপণের কাজটি এখনও চলমান। এখন প্রয়োজনীয় উপকরণ যথাযথ ও সঠিক সময়ে সরবরাহের মাধ্যমে চাষের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অর্থনীতির সহায়তায় প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। পোলট্রি শিল্পের ক্ষতি পোষাতে এ খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে বলা হয় প্রতিবেদনে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হলেও রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের বাজারভিত্তিক নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করে সিপিডি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় তৈরি পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটির কোনো নেতিবাচক প্রভাব প্রবৃদ্ধিতে পড়েনি। ব্যয় বাড়লেও এ খাতের ব্যবসায়ীরা আকাশপথে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে রপ্তানির বাজার ধরে রেখেছে। এতে তাদের লাভের পরিমাণ কমেছে।

সংস্থাটির পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বা অলস অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলো বসে আছে। গত অক্টোবর শেষে ব্যাংক খাতে ৮৬ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) বেড়ে যাচ্ছে, যা সুদের হারে প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিতে গিয়ে দায় যেন ব্যাংকের ওপর এসে না পড়ে সেজন্য আলাদা তহবিল গঠনের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025