শীর্ষবিন্দু নিউজ: শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির অজুহাতে রপ্তানি মূল্যের (এফওবি) ওপর প্রস্তাবিত নগদ সহায়তা আরও বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত নগদ সহায়তার হার চারগুণ বাড়িয়ে এক শতাংশ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে, যেকোনো সংকটে (অভিঘাতে) সম্ভাব্য কর্মচ্যুতির আশঙ্কা এড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত এফওবির ওপর বিশেষ নগদ সহায়তার পরিমাণ প্রস্তাবিত ০.২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে এক শতাংশ কারার অনুরোধ করা হয়েছে। বিশেষ নগদ সহায়তা বৃদ্ধির আবেদনের বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যে কারণে অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা এ দাবি জানিয়েছি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো এ বিষয়ে কিছু জানানো হয় নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এ দাবি যৌক্তিক। কারণ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির কারণে পোশাক কারখানার ব্যয় ৭৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে বিজিএমইএ’র দাবি যুক্তিসংগত নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সার্বিক দিক বিবেচনা করে। তারপরও সরকার পোশাক খাতের কথা চিন্তা করে উৎসে কর ০.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৩ ধার্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরও এফওবির ওপর এক শতাংশ নগদ সহায়তা চাওয়া বাস্তবসম্মত নয়।
এদিকে অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে পোশাক কারখানার উৎপাদন ব্যয় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ এফওবির ৫.৮৪ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ১৫’শ শ্রমিকের কারখানার (যা মাসে ৭.৭ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করে) মজুরি খরচ ছিলো প্রতি মাসে এক কোটি টাকা। যা ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ বেতন বৃদ্ধি পেল ৪৫ লাখ টাকা। যা এফওবির ৫.৮৪ শতাংশ।
এ উদাহরণ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, পোশাক রপ্তানিতে এফওবি মূল্যের ওপর ০.২৫ শতাংশ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলে মাসে একটি কারখানা আর্থিক সহায়তা পাবে ১ লাখ ৯২ হাজার টকা। এতে প্রস্তাবিত বিশেষ সুবিধার পরও কারখানাগুলোকে এফওবির প্রায় ৫.৫৯ শতাংশ অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। এটা বিশাল অর্থনৈতিক এক চাপ।
পোশাক খাতকে দেশের অর্থনীতির প্রাণ উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বেতন বৃদ্ধির ফলে পোশাক শিল্পে আর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি গত দুই বছরে টাকার অতিমূল্যায়ন, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ ইউটিলিটিজের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি, ব্যাংক সুদ, ইন্স্যুরেন্স, পরিবহন খরচ বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় প্রায় ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার তুলনায় প্রস্তাবিত ০.২৫ শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা নিত্যন্তই অপ্রতুল।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগে পোশাক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এতে অধিকাংশ পোশাক কারখানাকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। এমনকি দুর্বল কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। অপরদিকে ৭৬.৬৭ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দরপতনে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক চাপে রয়েছেন।
এছাড়া হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সাপ্লাই চেইনে দারুণ ধস এবং রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সরকারের সহায়তামূলক পদক্ষেপের কারণে আমাদের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।