শীর্ষবিন্দু নিউজ: অগভীর সমুদ্রের দু’টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করলো পেট্রোবাংলা। মডেল পিএসসি-২০১২ (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) অনুযায়ী এই চুক্তি করা হয়। সোমবার বিকেলে পেট্রোসেন্টারে পেট্রোবাংলা এবং ভারতের ওয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস করর্পোরেশন-বিদেশ (ওএনজিসি) এবং অয়েল ইন্ডিয়ার সঙ্গে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়। এতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্সকে ১০ শতাংশ শেয়ার দেওয়া হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মানুষ এখন উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি চায়। আমরা এই চুক্তির মাধ্যমে সেদিকেই এগিয়ে যাব। হয়তোবা ৫ বছরে এর সফলতা পাওয়া যাবে না। বড় কোম্পানিকে এই কাজটি দেওয়া হলো। তারা দ্রুতগতিতে কাজ করতে চায়। এতে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ভারতীয় হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমরা আশা করি। ভারতের সঙ্গে অমিমাংসিত সমুদ্রসীমা দ্রুতই চূড়ান্ত হবে। তাদের (ভারত) সহযোগিতা পেলে ভালো হবে। তখন আরও গভীর সমুদ্রের দিকে নজর দিতে চাই। মঞ্চে বসা ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণও মাথা নেড়ে তাতে সায় দেন। এর আগে দেওয়া বক্তব্যে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এই চুক্তি মাইল ফলক। দু’দেশই এতে উপকৃত হবে। ভারত-বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি।
ব্লক নম্বর এসএস ৪ এবং এসএস ৯ এর জন্য ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে এই চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় ১৪ হাজার ২শ ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২ডি সাইসমিক সার্ভে ও দু’টি কূপ খনন করবে। ব্লক দু’টিতে গ্যাস বা তেল পাওয়া গেলে পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করবে কোম্পানিটি। পেট্রোবাংলা যদি কিনতে না চায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেই তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে পারবে তারা।
উত্তোলিত গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট অংশ উৎপাদন খরচ বাবদ পাবে উৎপাদনকারী কোম্পানি। অবশিষ্ট অংশ ভাগাভাগি করা হবে। গ্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের হিস্যা সর্বোনিম্ন ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। আর তেলের ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ। দু’টি ব্লকের জন্য দুই ধাপে মোট ১৪৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার জামানত দিতে হবে। অবহেলার কারণে কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটলে জামানত বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
গত বছর অগভীর সমুদ্রে ৯টি ও গভীর সমুদ্রে ৩টি ব্লকের জন্য দরপত্র ডাকে পেট্রোবাংলা। অগভীর সমুদ্রে আরো দুটি ব্লকে যুক্তরাষ্ট্রের কনকো ফিলিপস (ব্লক ৭) এবং স্যান্টোস-ক্রিস এনার্জির (ব্লক ১১) সঙ্গে চলতি মাসেই চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) ২০১২ প্রণয়নের পর ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ব্লকগুলো বাদ রেখে ডিসেম্বর ২০১২-তে গভীর ও অগভীর সমুদ্রের ১২টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। আর ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মন্ত্রীসভা কমিটি অনুমোদন দেয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে চরম জ্বালানি সংকট চলছে। আমি বিশ্বাস করি এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ প্রমুখ।