শীর্ষবিন্দু নিউজ: দীর্ঘ ১৬ বছর পর কক্সবাজার জেলাবাসীর স্বপ্নের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাস্তব রূপ পেতে পাচ্ছে। কক্সবাজারবাসীর এ স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে কক্সবাজার আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কিনারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন। আর এ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার বাসীর ১৬ বছরের দাবির অবসান হতে যাচ্ছে।
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর তথ্য মতে, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে। ১৯৯৮ সালে কক্সবাজার সফরে আসেন তৎকালীন বিসিবি’র সভাপতি সাবের হোসেন চোধুরী। সে সময় কক্সবাজারের সচেতন মহল, ক্রীড়া সংগঠকরা কক্সবাজারে একটি আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির দাবি জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সাবের হোসেন চোধুরী কক্সবাজার জেলে পার্ক সংলগ্ন মাঠকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিমার্ণের পরিকল্পনার কথা জানান। এ ঘোষণার পর তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জেলে পার্ক সংগ্নল মাঠ সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিমার্ণের পরিকল্পনা এগিয়ে ছিল অনেকটা। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিমার্ণের জন্য তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় ক্রিড়া সংগঠকসহ সচেতন বিভিন্ন মহল, সংগঠন কক্সবাজারে একটি আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু ২০০৫ সালে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য পছন্দের স্থানটিতে তৈরি করা হয় বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল।
ক্ষমতার পালাবদলের হওয়ায় পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃতে মহাজোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসলে কক্সবাজারে ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ফের সচল হয়। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে আবারো নানা কর্মসূচি পালন করতে আরম্ভ করেন স্থানীয় মহল।
এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এতে স্টেডিয়ামের জন্য স্থান নির্ধারণ নিয়ে দফায় দফায় চিঠি আদান-প্রদান আরম্ভ হয়।
স্থান নির্ধারণ নিয়ে আরম্ভ হয় নানা জটিলতা। এ জটিলতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সফরে আসেন ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল। ওইদিন কক্সবাজার জেলেপার্ক মাঠের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর থেকে বিসিবি ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর উখিয়ার দলীয় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্টেডিয়ামের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে এ স্টেডিয়াম। পর্যটনের গলফ মাঠের ৫১ একর জমিতে নির্মিত এ স্টেডিয়াম রোববার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে এর মধ্যেও রয়ে গেছে একটি জটিলতা। পর্যটন কর্পোরেশনের মালিকানাধীন গলফ মাঠে স্টেডিয়ামটি তৈরি হওয়ায় জমির মালিকানা রয়ে গেছে পর্যটনের অধীনে। ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে এ কথা স্বীকার করেছেন বিসিবি’র সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
তিনি জানান, পর্যটন কর্পোরেশনের সঙ্গে আলাপ করে এ জমির মালিকানার বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা হবে। কক্সবাজার স্টেডিয়ামটি তৈরি করতে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করেছে বিসিবি। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে বিসিবির একটি বৈঠকও হয়েছে। এতে কক্সবাজার স্টেডিয়ামের জায়গাটি বিসিবিকে হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। খুব শিগগিরই স্টেডিয়ামের জায়গাটি বিসিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। তখন সরকার থেকে যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে তা দিয়ে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ বাকি কাজ করা হবে।
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি বলেন, রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে নবনির্মিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিলো- বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক লাখ দর্শক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম কক্সবাজারে নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষে কক্সবাজারে নবনির্মিত স্টেডিয়ামে প্রচুর জায়গা রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার স্টেডিয়ামকে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের খালি জায়গাগুলোতে একাডেমি ভবন, হোটেল, জিমনেশিয়াম, সুইমিং জোনও করা হবে। রোববার প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ স্টেডিয়াম উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে বিসিবি। আর এ উদ্বোধনকে কক্সবাজারবাসী ১৬ বছরের দাবির অবসান ঘটিয়ে বাস্তব প্রতিফলন হিসেবে মনে করছেন স্থানীয় ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রতীরে দৃষ্টিনন্দন এ ক্রিকেট স্টেডিয়াম যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে। এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ক্রিকেট খেলা দেখার পাশাপাশি সমুদ্র দর্শন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। পাল্টে যাবে কক্সবাজারের চেহারা। এতে কক্সবাজারবাসী আনন্দিত।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ কক্সবাজার বাসীর প্রাণের দাবি ছিলো। বর্তমান সরকার সেই দাবিটি পূরণ করছে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা সারা বিশ্বে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে। ফলে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাবে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।