শীর্ষবিন্দু নিউজ: তিন দফা সময় বাড়ানোর পরও আলোর মুখ দেখে নি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পটি। মূলত ঋণ প্রাপ্তি না হওয়ায় অনিশ্চিত হযে পড়েছে এ প্রকল্প। এমনকি দ্রুত কাজ শুরু না হলে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিলেরও আশংকা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সরকার আট টাকা ৭৫ পয়সা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কেনার কথা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কে এম মোজাম্মেল হক।
রাজধানীর গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গত বছরের ১৮ এপ্রিল ইতালিয়ান প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্স’র (এসআরএল) সঙ্গে চুক্তি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। চুক্তি অনুযায়ী আমিন বাজার ও মাতুয়াইলের ভাগাড়ের বর্জ্য ব্যবহার করে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার কথা। ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত এ প্রকল্পে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দেড় বছরে দুটি প্ল্যান্টে ১০ মেগাওয়াট, দুই বছরে ৩০ মেগাওয়াট ও তিন বছরে ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদনে যাওয়ার কথা। বর্জ্যের সরবরাহ সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে দুটি প্ল্যান্টে উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার কথা। ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬/৭ হাজার টন বর্জ্য জমা হয়। এ বর্জ্য ব্যবহার করে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই ছিল প্রকল্পের লক্ষ্য।
স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, গত বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে কাজ শুরুর কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয়। তবে এ সময়েও কাজ শুরু করতে না পেরে আবারো ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে ওই সময়ে কাজ শুরু করা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কে এম মোজাম্মেল হক জানান, চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে। কিন্তু ঋণ না পাওয়ার কথা বললেও তারা কাজ শুরু করতে পারে নি। সর্বশেষ তারা আগামী জুন পর্যন্ত সময় চাইলে মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
তবে এবার ঋণপ্রাপ্তিতে ব্যর্থ হলে সরকার অন্য চিন্তা করবে বলেও জানান এ সচিব। ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফাইন্যান্সের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, সার্বভৌম নিশ্চয়তায় (সভরেন গ্যারান্টি) সরকারের কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়ে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় বিলম্ব হচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়া যচ্ছে না। দুবাইয়ের একটি ব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ওই পদ্ধতিতে ঋণ প্রাপ্তির আলোচনা চলছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, দুটি প্রকল্পের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ৪৩ দশমিক চার একর জমি প্রতি বছর ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় কোম্পানিকে ইজারা দেবে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ২০ শতাংশ হারে এই ইজারার টাকা বাড়বে। ৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে এ প্রকল্পে সরকারের কোনো বিনিয়োগ নেই। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ‘নির্মাণ মালিকানা পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি)’পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ইতালীয় প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিনিয়োগ তুলে নিতে ২০ বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি পরিচালনা করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, দুটি কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) কিনবে। বিদ্যুতের সাথে দুটি প্ল্যান্ট থেকে উপজাত পণ্য হিসেবে বছরে নয় লাখ মেট্রিক টন জৈব সার পাওয়ার কথা। এদিকে চুক্তির ১৮ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো ঋণ সহায়তা পায় নি প্রতিষ্ঠানটি।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ময়লা-আবর্জনা সম্পদ হিসেবে ব্যবহার হবে। এর সফলতায় পরবর্তী সময়ে ঢাকার বাইরে আরো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই প্রতিষ্ঠানকে জোর তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হলে নতুন করে অন্য প্রতিষ্ঠান খোঁজা এবং কাজ শুরু করা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ।