শীর্ষবিন্দু নিউজ: ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন আশাব্যঞ্জক হয়নি। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নও হয়েছে ধীরগতিতে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল এডিপিতে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু এটাকে ৫৩ হাজার ৮৭০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এখন সংশোধিত এডিপিতে ৬০ থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চাইছে পরিকল্পনা কমিশন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল এডিপির আকার হবে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রধানমন্ত্রী মতামতের ভিত্তিতে ৫৪ হাজার কোটি টাকার খানিক কম বেশি হতে পারে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এডিপি সংশোধন চূড়ান্ত করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম, আইএমইডি‘র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
পরিকল্পনা কমিশন আশা করছে, তারা চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে ৬০ থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে। মূল এডিপি থেকে কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুত ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানো হবে না। তবে, অন্য খাত থেকে বরাদ্দ কাঁটছাট করা হচ্ছে। একই বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের রূপরেখার ওপর গণভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মূলত এই বৈঠকেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে।
বৈঠক প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জানান, এডিপিতে কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ নির্ধারণে পরিকল্পনা কমিশনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শেষে আমরা আমাদের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো। এর আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে, আমরা আশা করছি চলতি অর্থবছরে ৬০ থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীই আমাদের সিদ্ধান্ত দেবেন এডিপির আকার কেমন হবে। কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে অর্থপ্রাপ্তির উপর। আমি আশাবাদী ৬০ থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারব।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, আগামিতে প্রকল্প সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। এত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার চেয়ে কম প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও অনেক সহজ হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা খরচ কমে আসবে। তিনি বলেন, ১৬টি প্রকল্প যদি ১৬ বছর ধরে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলেতো ১টি প্রকল্প এক বছরের মধ্যেই শেষ করা ভালো। তিনি জানান, নতুন ৭টি প্রকল্প যোগ করা হবে। এছাড়া ধীরগতির প্রকল্প ২০০টির বেশি হবে না বলে জানান মন্ত্রী।
একইসঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বরাদ্দ কমবে না বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে কমানো হচ্ছে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, আর বৈদেশিক সহায়তার অংশ থেকে কমানো হচ্ছে ৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত এডিপিতে সব চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে পরিবহনখাতে। সড়ক, সেতু, রেলওয়ে, নৌ ও বেসামরিক পরিবহনসহ মোট বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ২৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের পরিমাণ ৬ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ২ হাজার ৫৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এর পরেই রয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৭২০ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের পরিমাণ ৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ৩ হাজার ২০৫ কোটি ৩ লাখ টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা শিক্ষা ও ধর্ম খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ১১০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৯৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এছাড়া, সংশোধিত এডিপিতে অন্যান্য খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে- কৃষি খাতে মোট ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, পল্লী উন্নয়ন খাতে মোট ৫ হাজার ৯৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা, পানিসম্পদ খাতে মোট ১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, শিল্পখাতে মোট ২ হাজার ৭০৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে মোট ১ হাজার ৫৯২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা টাকা, যোগাযোগ খাতে মোট বরাদ্দ ৮৭৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৪ হাজার ৭১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে মোট ২১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে মোট ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে মোট ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন খাতে মোট ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে মোট ৪৫২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে মোট ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং গণসংযোগ খাতে মোট ৫৯ কোটি টাকা।