শীর্ষবিন্দু নিউজ: বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক গ্রাহকের ১৬ লাখ টাকা লোপাট করেছে। আমানতকারীর অর্থ লুটের অভিনব অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। প্রবাসী এক বাংলাদেশি বাংলাদেশ ব্যাংকে এই অভিযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে সিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ লোপাটের এ অভিনব ঘটনার কথা জানা গেছে।
অভিযোগে ওই প্রবাসী বলেছেন, ব্যাংকটি তার কষ্টে জমানো ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা লোপাটের ফন্দি-ফিকির করছে। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টের অর্থেই সচল বাংলাদেশের অর্থনীতি। নিজের সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে উপার্জিত অর্থ দেশে নিয়ে এসেছিলেন, তা হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন একেএম আসাদুজ্জামান নামের ওই প্রবাসী।
অভিযোগে তিনি বলেছেন, গত ৬ মাসে তার জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যাংকের যশোর শাখার পাশাপাশি সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েও এসেছেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল পাননি। শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হতে হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ লোপাটের কথা স্বীকারও করেছেন সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে স্থাপিত গ্রাহক অভিযোগ কেন্দ্রের প্রধান নাসিম আহমেদ বাংলানিউজের কাছে ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত বছরের ১২ নভেম্বর আসাদুজ্জামান লিখিত অভিযোগ করেন। তবে যশোর শাখার ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তিনি তার আনীত অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
সূত্র মতে, আসাদুজ্জামান মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরে গত বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতে সিটি ব্যাংকে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দেন। পরে শাখায় যোগাযোগ করলে জানানো হয়, তার হিসাবে টাকা জমা হয়নি। এমনকি জমার বিষয়টি ব্যাংকের ট্রেজারিতেও তোলা হয়। শুনে মাথায় যেন বাজ পড়ে আসাদুজ্জামানের। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, পরে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামানকে লিখিত আকারে অভিযোগ করতে বলেন। একই সঙ্গে তার ডিপোজিট স্লিপ’র মূল কপিও জমা দিতে বলা হয়। তিনি অভিযোগ করলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।
আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হন সম্প্রতি। তিনি বলেন, ব্যাংকটি তার জমানো কষ্টের অর্থ লোপাট করার ফন্দি-ফিকির করছে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চান। আসাদুজ্জামান জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার ডিপোজিট স্লিপ’র মূল কপি জমা দিতে বলে। আমি ফটোকপি জমা দিয়েছি। মূল কপি জমা দিলে সেটি গোপন করে ফেললে আমার কাছে আর কোনো প্রমাণ থাকবে না। তখন তারা হয়তো আর টাকা ফেরত দেবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আমলে নিয়ে সিটি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে আসাদুজ্জামানের টাকা ফেরত দিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশই এখন তার শেষ ভরসা। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের এটাও বলেছেন, এ টাকা না পেলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে। আমি রাস্তার ফকির হয়ে পথে বসে যাবো।
মো. নাসিম বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ পরিপালন করে ২৫ মার্চের মধ্যে এর সমাধান করার চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি টাকা ফেরত দিতে। না দিলে পরের পদক্ষেপে ব্যাংকটিকে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার জন্য পূর্ণ মেয়াদে সুদ দিতে হবে। এখানে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।