শীর্ষবিন্দু নিউজ: মিটার টেম্পারিং করে শত শত কোটি টাকার গ্যাস চুরি করেছে যমুনা গ্রুপ। তাদের ১৭টি প্রতিষ্ঠানে মিটার টেম্পারিং করার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, যমুনা গ্রুপের কারখানাগুলোতে মিটার টেম্পারিংয়ের অভিযোগ অনেক পুরনো। তাদের কারখানার মিটার পরীক্ষা করতে দেওয়া হতো না। কেউ পরীক্ষা করতে গেলে কারখানায় ঢুকতেই দেওয়া হতো না। এমনকি ভিজিলেন্স টিমকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হতো বলেও জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক রিপোর্টে দেখা গেছে, গাজীপুরের সফীপুর এলাকায় যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান যমুনা স্পিনিং মিলে ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২৫ মাস গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। কারখানাটির জন্য অনুমোদিত লোড রয়েছে ঘণ্টায় ২০৮৯.৭৮ ঘনমিটার। শর্ত অনুযায়ী তাদের কারখানা ১২ ঘণ্টা চালু রাখার কথা। সে হিসেবে তাদের মাসে গ্যাসের লোড দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৬ ঘনমিটার।
সাধারণ দিনে ৬ ঘণ্টা কারখানা চালু থাকলে ন্যূনতম বিল হওয়ার কথা। কিন্তু যমুনা স্পিনিং মিল মাত্র এক মাস অনুমোদিত গ্যাসের বিল দিয়েছে। আর ১২৪ মাস ন্যূনতম বিল এসেছে। অর্থাৎ তাদের কারখানাটি দিনে সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা চালু ছিল ১২৪ মাস। একইভাবে যমুনা নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড ১৯১ মাস, যমুনা ডেনিম ফেব্রিক্স লিমিটেড ১০২ মাস ও যমুনা ডেনিম গার্মেন্টস লিমিটেড ১০৫ মাস এবং অন্ধেরটেক এলাকার স্থাপিত শামীম স্পিনিং মিল ৬২ মাস ন্যূনতম বিল দিয়েছে।
গ্যাস ব্যবহারের এই বিল বলে দেয় তাদের কারখানা প্রায়ই বন্ধ থাকে। কিন্তু তিতাসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তারা দিনে ৬ ঘণ্টা নয়, ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত কারখানা চালিয়েছে। বিশেষ করে স্পিনিং মিল ২৪ ঘণ্টাই চালু ছিলো। কিন্তু যমুনা স্পিনিং মিলে দেখা গেছে ১২৫ মাসের মধ্যে ১ মাস স্বাভাবিক বিল এসেছে। আর ১২৪ মাস ন্যূনতম বিল এসেছে। তিতাস দাবি করেছে, মিটার টেম্পারিং করায় গ্যাস ব্যবহার হলেও বিল কম উঠেছে।
তিতাসের রিপোর্টে দেখা গেছে, শামীম স্পিনিং মিলস মাত্র ৫.২৫ শতাংশ সময়ে চালু ছিল।শামীম কম্পোজিট চলেছে ৪.৪২ শতাংশ সময়ে। একই ধরনের অন্য গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি গ্যাস বিল দিয়েছে। তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জানিয়েছেন, যমুনা গ্রুপের কারখানাগুলোতে গ্যাস ব্যবহারের যে হার তাতে গ্রুপটি এতদিন দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা ফুলেফেঁপে উঠছে। মূলত তারা মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরি করেছে। যে কারণে মিটার পরীক্ষা করতে গেলে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।
তিনি জানান, তিতাস গ্যাস তাদের অনিয়ম তদন্তে নেমেছে। যে কারণে তিতাসের কর্মচারীদের প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুল। বিশাল অংকের চুরির পরও যে বিল এসেছে সেটিও দিতে চায় না যমুনা গ্রুপ। তাদের কাছে তিতাস এর প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও সেই বিল তারা দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নওশাদ ইসলাম।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলে নূরুল ইসলাম বাবুল তার মালিকানাধীন এক সংবাদপত্র দিয়ে নানা ধরনের মানহানিমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করতে থাকেন। এ বিষয়েও যমুনা গ্রুপের বিরুদ্ধে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আইনগত নোটিশ পাঠিয়েছেন মঙ্গলবার।
মিটার টেম্পারিং করে শত শত কোটি টাকার বিল ফাঁকি আর বকেয়া বিল না দেওয়ায় যমুনা গ্রুপের পাঁচটি কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বিকেলে কারখানাগুলোর সংযোগ কাটতে গেলে শেষ মুহূর্তে মুচলেকা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চালান যমুনার স্বত্ত্বাধিকারী নূরুল ইসলাম বাবুল। আগেও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে গেলে যমুনা গ্রুপের ভাড়াটিয়াদের হামলার শিকার হয়েছে তিতাসের কর্মকর্তারা। নূরুল ইসলাম বাবুলের অস্ত্রধারী গুন্ডারা একাধিকবার পরিদর্শকদের ওপর কারখানা গেটে হামলা করেছে বলে জানায় সূত্রটি। এছাড়াও ২০০৫ সালে জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটি পরিদর্শনে গেলে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।