আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমা বিশ্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রও এখন অভ্যন্তরীণ বা গৃহকোণে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের (হোম গ্রোন টেরর) নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছে। এই জঙ্গিদের উত্থান এবং দমন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সব জায়গায় হিমশিম অবস্থা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে গৃহকোণে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের প্যারিসে সন্ত্রাসী ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গি দমনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে পাশে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, কেবল গোয়েন্দা বা সামরিক শক্তি দিয়ে অভ্যন্তরীণ জঙ্গিবাদের উত্থান রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ধীর এবং পদ্ধতিগত কাজের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের সঙ্গে নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
আল-কায়েদা, তালেবান, বোকো হারামসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এখন অভ্যন্তরীণ জঙ্গি দমনের কাজে ব্যস্ত। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পরে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে পশ্চিমা বিশ্ব মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে থাকে। এসব বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই বাইরের কোনো যোগাযোগ নেই।
এদের অনেকে নিজেই জঙ্গি ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। জঙ্গিদের কোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ নেই। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যুবকেরা জঙ্গিবাদের শিক্ষা নিচ্ছে। জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। নিজেরাই সন্ত্রাসী কাজে নেমে পড়ছে। পশ্চিমা সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পারিবারিক পরিবেশ, ব্যক্তিগত হতাশা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে এ ধরনের জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে।
২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ জঙ্গি বা হোম গ্রোন টেররিস্টের উত্থান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে গাড়িবোমা বিস্ফোরণসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় মার্কিন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এসব ঘটনায় মুসলমান যুবকদের জঙ্গি ভাবাদর্শে লিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় বলে দাবি করা হয়। সেনাছাউনিতে নির্বিচারে গুলি ছোড়া, বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেশের অভ্যন্তরীণ জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। জঙ্গিরা নেতাদের বক্তব্য শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেরাই সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়ে। জঙ্গিদের কোনো সংগঠন নেই, যোগাযোগ, চলাচল সবই নিজেদের মধ্যে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর অনেক আগে থেকেই নজরদারির অভিযোগ উঠেছে। অনেক আগে থেকেই মসজিদসহ মুসলমান স্থাপনায় সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা জঙ্গিদের উত্থান ঠেকানো যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেনিস ম্যাকডোনো জঙ্গিদের দমনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান কমিউনিটির সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘সি সামথিং সে সামথিং’ স্লোগানটি প্রচার করা হচ্ছে। কিছু দেখলে চুপ করে না থেকে কর্তৃপক্ষকে জানানোর আহ্বান করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেও ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে হয়রানি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করার ঘটনা ঘটেছে।