শীর্ষবিন্দু নিউজ: আসন্ন ১৫ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের এক সপ্তাহ আগে অবশেষে শুক্রবার নির্বাচনের মাঠে নতুন আমেজ যুক্ত হয়েছে। ১৮ সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দলীয় বিরোধ মিটিয়ে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের অ্যাডভোকেট শামসুজ্জান জামান। তারা প্রকাশ্যে কোলাকুলিও করেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে এক হলেন আরিফুল হক চৌধুরী ও এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। আর এই এক হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘ একযুগের দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থী। আর এডভোকেট জামান ছিলেন এবারের নির্বাচনে বিএনপি’র সমর্থন প্রত্যাশী প্রার্থী। নির্বাচনে মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের একদিন আগে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আরিফকে সমর্থন দেয়ার পর এডভোকেট জামান তার মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে ভোটের মাঠে জামান অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে আরিফুল হক চৌধুরী নিজে থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করায় এই দ্বন্দ্বের মিটমাট হলো।
দ্বন্দ্বের শুরু হয়েছিল একযুগ আগে। বিগত জোট সরকারের সময় অতি ক্ষমতাধর আরিফুল হকের অত্যাচারে জর্জরিত হয়েছিলেন সিলেট বিএনপি’র তরুণ নেতা এডভোকেট জামান। এমনকি পুলিশ পাঠিয়ে জামান ও তার পরিবারকে অপদস্থ করা হয়েছিল। সেই থেকে আরিফ ও জামান দুই মেরুর বাসিন্দা। একই দল করলেও এই দুই নেতা একসঙ্গে বসতে পারেননি। একত্রে চালাতে পারেননি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। উল্টো স্রোতে রাজনীতি করে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াসের হাত ধরে জামান আবার সিলেটের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এবং ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার পর জামান ক্রমেই রাজপথের লড়াকু নেতায় পরিণত হন।
শেষ মূহূর্তে আরিফ বৃহস্পতিবার ঢাকার বাসায় ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনার সঙ্গে দেখা করার পর শুক্রবার বিকাল পৌনে ৫ টার দিকে ছুটে যান এডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের শিবগঞ্জ সবুজবাগস্থ বাসায়। আরিফুল হক এডভোকেট জামানের বাসায় যাওয়ার আগেই সেখানে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মী। আরিফুল হক বাসায় গিয়ে সোজা চলে যান এডভোকেট জামানের মায়ের কাছে। তিনি জামানের মায়ের পায়ে ধরে সালাম করেন এবং অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চান। একই সঙ্গে আরিফ নির্বাচনে তার জন্য দোয়া চান। এরপর ড্রইং রুমে এসে জামানকে জড়িয়ে ধরেন আরিফ। বেশ কিছুক্ষণ কোলাকুলির পর দুইজন একসঙ্গে বেরিয়ে আসেন বাসার উঠোনে। উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ের পাল্লা আরিফুলের দিকে বেশি ঝুকে পড়ল। এদিকে দুই নেতার মনোমালিন্য মিটে যাওয়ায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পুরোদমে। অপরদিকে মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগে ১৪ ও ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ ভোটের মর্যাদা কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ঘুরেফিরে স্থান করে নেয়ায় রাজনীতি-সচেতন মহল নড়েচড়ে উঠেছে।
একাধিক সূত্রমতে, ১৪ ও ১৮ দলের দুই প্রার্থীর সপক্ষে গণসংযোগ ছাড়াও অন্য মিশন নিয়ে নেতারা সিলেট ছুটে আসছেন। তাদের এই মিশন হচ্ছে—বড় দুই দলে এখনও যেসব ছোটখাটো ফাটল রয়েছে, তা মেরামত করে নিজ নিজ প্রার্থীকে টেনশনমুক্ত করে রাখা। সে লক্ষ্যে ঘরোয়া বৈঠকে দুর্বলতা-সবলতা পরখ করে দেখে নেতারা সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, প্রয়োজনে দুই নেত্রীর পরামর্শকেও গ্রহণ করছেন। ফলে সরকার ও বিরোধী দলের অঘোষিত ভোটযুদ্ধে স্থানীয় রাজনীতির ময়দান সরগরম হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত: ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ঢাকায় এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্থানীয় ইলিয়াস অনুসারীদের নিয়ে শুক্রবার বিকালে বৈঠক করেছেন। অন্যদিকে ১৪ দলের নেতারা তাদের ভোটব্যাংকগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং ছোটখাটো মনঃকষ্ট নিরসনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলের সমর্থন নিয়ে নাসিম হোসাইন, এডভোকেট জামান ও আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকি শুরুতেই আরিফকে টক্কর দেন। তবে চেয়ারপারসনের মত আরিফের পক্ষে যাওয়ার পরও ইলিয়াস বলয়ের নেতারা নীরব থাকেন।
Leave a Reply