আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মেক্সিকোর টেনানসিঙ্গো এক অদ্ভুত শহর। শক্তিশালী মানব পাচারকারীচক্র এখানে সক্রিয়। এখানে ছেলেদের ছোটবেলা থেকে বড় করা হয় পতিতাবৃত্তির দালাল হয়ে উঠতে। নারী ও মেয়েদের বাধ্য করা হয় পতিতাবৃত্তিতে যুক্ত হতে।
এদের কেউ রাস্তায়, কেউ আবাসিক পতিতালয়ে, কেউ অনলাইনে, কেউ বারে কাজ করে। তাদের ও তাদের পরিবারকে সহিংসতা, প্রতারণা, ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হয়। আধুনিক দাসত্বের ফাঁদে আটকা পড়েছে এ নারী ও মেয়েরা। গত কয়েক দশক
ধরে মানব পাচার ও শোষণকে নিপুণ বাস্তবধর্মী বিজ্ঞানে পরিণত করেছে এখানকার অপরাধ চক্রগুলো। খবর সিএনএন’র। মেক্সিকোর ছোট্ট এক মফঃস্বল শহরে বসবাস রোজার। ১৭ বছর বয়সে প্রথম তাকে এক পুরুষ কাপড় বিক্রির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শিগগিরই ওই ব্যক্তি তার প্রণয়প্রার্থনা করে, আর প্রেমে পড়ে যায় রোজা।
আবেগের তোড়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে টেনানসিঙ্গোয় পাড়ি জমায় সে। সেখানেই রোজাকে নিজের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় ওই ব্যক্তি। শহরজুড়ে চাকচিক্যে ভরা বহু বাড়ি তাকে ঘুরিয়ে দেখায় তার প্রেমিক। একপর্যায়ে প্রেমিকের প্রস্তাব, যদি তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে কাজের জন্য যায় রোজা, তবে সে-ও একদিন এমন নজরকাড়া বাড়ির মালিক হতে পারে। রোজা রাজি হয়। নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রোজা যখন মেক্সিকো ছাড়ে, ততদিনে তার বয়স হয় ১৮।
এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে মেয়েটি। কিন্তু তখনই তার পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, যে চাকরির প্রতিশ্রুতি তাকে দেওয়া হয়েছিল, তেমন কিছুর আদৌ অস্তিত্বই নেই। বরং, তার ‘বয়ফ্রেন্ড’ তাকে পতিতাবৃত্তিতে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। তখনও তার বয়স ছিল মাত্র ১৮। নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সি শহরের পতিতালয়ে অর্থের বিনিময়ে যৌনতা বিক্রি করাই ছিল তার পেশা। কয়েক সপ্তাহের জন্য কক্ষ ছেড়ে বের হওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
খুব ভালো হতো, যদি রোজাকে বলা যেত, ‘তার মতো এমন হতভাগা কেউ নেই। আমেরিকার মতো দেশে এসব ব্যতিক্রম’। কিন্তু না, তাকে এটা বলা যাবে না। কারণ, রোজার মতো অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আমেরিকায়।
২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচারকারী সংগঠনগুলোর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে, এমন সংগঠন প্রায় ২১ হাজার যৌনতা ও শ্রম সংক্রান্ত পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তবে মেক্সিকোর টেনানসিঙ্গো হয়ে যেসব ভুক্তভোগী নারীদের কথা শোনা যায়, তাদের কাহিনী সবচেয়ে বেদনাবিধুর।
পুরী বিশ্বজুড়ে আধুনিক দাসত্বের যে বিস্তার, তা ভীতিকর। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সারা বিশ্বে যৌন পাচারের শিকার। এরা এমন এক খাতে কাজ করে, যেখান থেকে প্রতিবছর অপরাধী চক্র আয় করে কয়েকশ’ কোটি ডলার।
তবে এ লড়াইয়ে জেতা সম্ভব। রোজাই হতে পারে অনুকরণযোগ্য প্রেরণা। পাচারকারীদের খপ্পর থেকে পালাতে পেরেছিল সে। নিউ জার্সির নিউয়ার্কের একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ছিল সে। সেখান থেকেই নিজের জীবনকে নতুন করে গড়ার সক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করে। পরে একটি পার্টটাইম চাকরি পায় রোজা। সেখানে তার পারফরম্যান্স ভালো হওয়ায়, এখন ফুলটাইম চাকরি করছে সে। এখন তার জীবনের আশার আলো নতুন করে দীপ্তি ছড়াতে শুরু করেছে।