শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমের দেশ ইকুয়েডরে নিহতের সংখ্যা লাফ দিয়ে বাড়ছে। ভূমিকম্পে সবশেষ ২৭২ জন নিহতের খবর জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইকুয়েডরের উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭২ জনে দাঁড়িয়েছে; আড়াই হাজার মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধসে পড়েছে বহু ভবন, সেতু; সড়ক ব্যবস্থা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, ভূমিকম্পের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকাপড়াদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেউ জীবিত আটকা পড়েছেন কিনা সে বিষয়েও চলছে অভিযান। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় পুলিশ প্রধান মিল্টন জারাত বলেন, পেদারনালেসের ৬০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। যথাসাধ্য করার চেষ্টা করা হলেও আসলে খুব বেশি কিছু করার সামর্থ্য নগর কর্তৃপক্ষের নেই। পানি, খাবার আর কম্বলের অভাবের মধ্যে লুটপাট শুরুর খবরও পাওয়া গেছে বলে শহরের মেয়র গাব্রিয়েল আলশিভার বিবিসিকে জানিয়েছেন।
দুর্গত এলাকায় ইতোমধ্যে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে শুরু করেছে। খাবার ও জরুরি সামগ্রীর প্রথম চালানগুলো এসেছে প্রতিবেশী দেশ ভেনেজুয়েলা ও মেক্সিকো থেকে। প্রশান্ত মহাসাগরে ‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় একুয়েডরের অবস্থান। ১৯৭৯ সালের পর সেখানে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা।
উদ্ধার অভিযানে কয়েক হাজার নিরাপত্তা কর্মী ও কয়েকশ মেডিকেল স্টাফ অংশ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। ঘটনাটিকে এক দশকে ইকুয়েডরের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাস। এছাড়া শান্ত ও সংঘবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়া লেখেন, ধ্বংসস্তূপে আটকাপড়াদের উদ্ধার এখন আমাদের মূল লক্ষ্য। সবকিছু নতুন করে পুনরায় তৈরি করা যাবে, কিন্তু যারা নিহত হয়েছেন তাদের আর ফেরানো যাবে না, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রোববার ভোর ৫টা ৫৮ মিনিটে) ইকুয়েডরে আঘাত হানা শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮। ইউএসজিএস জানায়, শক্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিলো দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় শহর মুইসিন থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৯ কিলোমিটার গভীরে। এ ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পর আরও দুটি কম্পন অনুভূত হয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছে পর্যটন শহর পেদারনালেস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসগারের তীরে পামগাছ ঘেরা ছিমছাম শহরটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বহু মানুষকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির সঙ্কট। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে এখনো মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ভূমিকম্পের পরপরই তৎক্ষণাৎ দেশটির উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে সরকার। তবে ঘণ্টা দুয়েক পর সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, সুনামির আশঙ্কা অনেকখানিই কেটে গেছে। অবশ্য দেশজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, বিশ্বের বড় ভূমিকম্পগুলোর একটি ইকুয়েডরেই হয়েছে। ১৯০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূকম্পন হয় দেশটিতে।
শনিবারের ওই ভূমিকম্পের পর থেকে পেদারনালেস এলাকায় দেড়শর বেশি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। স্বজন হারানোর বেদনার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কাজ করছে আতঙ্ক। এর মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামলে তাদের ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
১৬ মাস বয়সী যমজ শিশুর মা আনা ফারিয়াস (২৩) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা ভাগ্যবান, আমরা তখন রাস্তায় ছিলাম। আমার পুরো বাড়ি ধসে পড়েছে। আজ রাত আামদের বাইরেই কাটাতে হবে।
ইটালি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফিরে এসে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরা উদ্ধারকাজে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, সবকিছু আবার নতুন করে গড়ে তোলা যাবে, কিন্তু প্রাণহানির ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। ভয়াবহ সেই ভূমিকম্পের পরপরই একুয়েডর সরকার দেশের ছয়টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করে। উদ্ধারকাজে নামানো হয় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের।