রোমান্সের শহর এবং বিখ্যাত লুভর মিউজিয়ামের জন্য ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের কাছে বেশ পছন্দের একটি শহর প্যারিস। তবে এত সুন্দর, এত চমৎকার গোছানো শহরের ভেতরটা জড়িয়ে আছে এক ভয়ংকর ইতিহাসে।
প্যারিস এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে। ইতিহাসে বলা হয়ে থাকে, এই শহরের নিচে লুকিয়ে আছে লাখ লাখ মানুষের কঙ্কাল। এমনই ভয়ংকর রহস্যের শহর, অথচ এ নিয়ে জানেই বা কয়জন!
অন্ধকার এক ভয়ংকর ট্যানেল। যেখানে হাঁটারও সাহস করতে পারেনা কেউ। এমনই ট্যানেল অবস্থিত প্যারিসের মতো অতি সুন্দর শহরে। বলা হয়ে থাকে এই ট্যানেলটিতে সারি সারি করে সাজানো রয়েছে লাখো মানুষের কঙ্কাল এবং মানুষের মাথার খুলি! অবাক করার মত হলেও এমনই ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্যারিস শহর।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তৈরি হচ্ছিল নতুন এক শিল্প সভ্যতা। তখন এই শহরটি মূলত পরিপূর্ণ ছিল খনিজসম্পদে। এক নদী থেকে পাথর আনা হতো এই শহরের বড় বড় ইমারত তৈরির জন্য। এই পাথর আনার কাজে খনন করা হয় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ। এই খনিজ ভান্ডার শেষ হয়ে যায় ৩০০ বছর পর। এই ঘটনার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে প্রায় সব সুড়ঙ্গ।
পরিত্যক্ত এই সুড়ঙ্গ এক সময় এই শহরের মানুষের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে থাকে। একটা সময় ধসে পড়তে শুরু করে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ। এই ঘটনার পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে প্যারিস নামক এই শহরে।
শিল্প বিপ্লবের কারণে অনেক বিখ্যাত ছিল এই শহর। এখানে তাই অনেক লোকেরই বাস গড়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু অধিক জনসংখ্যার কারণে এক সময় দেখা দেয় এক চাঞ্চল্যকর ব্যাপার। মহামারি ও যুদ্ধের কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে বেশ জটিল হয়ে পড়ে এদের সমাধি দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্থান খুঁজে পেতে।
এমন পরিস্থিতিতে ফরাসি সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, এদের গণকবর দেওয়া হবে। এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এখানে কবর দিতে তাদের গুনতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা। অনেক নিম্ন শ্রেণির লোকের বাস থাকায় এদের সামর্থ্য হতো না তাদের কবর দেওয়ার। ফলে স্তূপ করেই ফেলে রাখতে হতো তাদের।
এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ফরাশি রাজা হুকুম দিলেন লাশগুলো সেই পরিত্যক্ত সুড়ঙ্গে রেখে আসার জন্য। রাজার আদেশ পেয়েই শুরু হয় সেই খননের কাজ। একসময় খুঁড়ে ফেলা হয় আগে দেওয়া সব কবর। এবং এই হাড়, মাথার খুলি, অসংখ্য মানুষের কঙ্কালের জায়গা হয় সেই পরিত্যক্ত সুড়ঙ্গে।
এমনই ইতিহাসে জড়িয়ে থাকার পরও প্যারিস শহর নিজের সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে পৃথিবীর বুকে। তবে এমন ঘৃণিত ইতিহাস সবার মনেই এক বিষাদের গল্প হয়েই বেঁচে থাকবে আজন্ম কাল।
Leave a Reply