আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘সিজ্জিন কী’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।
আরবী সিজনুন শব্দ হতে সিজ্জিন শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ জেলখানা বা আটকাবস্থা ইত্যাদি। প্রচলিত অর্থে বদকার ব্যক্তির আত্মা কর্ম শেষে তার অসৎ বিবরণী নিয়ে শাস্তির অপেক্ষায় যে স্থানে বন্দী অবস্থায় থাকে, তাকে সিজ্জিন বলা হয়।
সিজ্জিন অনুযায়ী জাহান্নামের একটি স্থান, যা পাপীদের জন্য একটি সংকীর্ণ কারাগার বা তাদের খারাপ কাজের রেকর্ডের জন্য একটি নিবন্ধন বইকে বোঝায়, যেখানে তাদের আত্মাও থাকে। এটি কোনো ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক ধারণা যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ” পাপাচারীদের কর্ম বিবরণী সিজ্জিনে আছে। সিজ্জিন সম্পর্কে আপনি জানেন কি? এ এক লিখিত কর্ম বিবরণী ” ( সুরা মুতাফফিফীন, আয়াত ৭ হতে ৯)
সিজ্জিন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের বর্ননার পাশাপাশি তাসাউফের আলোকে দেখা যায় যে, যে ব্যক্তি নিজের মন্দ কর্মের ফলে ঈমান হারিয়ে মৃত্যুবরন করে তার আত্মা আল্লাহর সাথে মিশতে পারে না।
তখন সে আত্মা ছুটে আসে দেহের কাছে। কিন্তু দেহ পঁচে গলে বিনষ্ট হওয়ার ফলে সে দেহে স্থান পায় না। এমতাবস্থায় সে চরম মর্মযাতনা ভোগ করতে থাকে, যা সিজ্জিন নামে অভিহিত।
তবে মানুষ যদি তার হায়াতে জিন্দেগীতে কোন কামেল অলীর সান্নিধ্যে গিয়ে তার নির্দেশিত পথে সাধনা করে বা চেষ্টা করে তাহলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।
পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, মৃত্যুর পর মানুষের পুন্যময় আত্মাসমুহ পুনরুথ্থানের পুর্ব পর্যন্ত যে শান্তিময় স্থানে অবস্থান করে তাকে ইল্লিন বলে।
আর পাপাচারী মানুষের আত্মাসমুহ পুনরুথ্থানের পুর্ব পর্যন্ত যে অশান্তিময় স্থানে অবস্থান করে তাকে সিজ্জিন বলে।
জাহান্নামের স্থান: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ “কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের ‘আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? লিখিত কিতাব”।
এ বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ: ইমাম বগবী রহ. ও ইমাম ইবনে রজব রহ. একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে তিনি বলেন, সিজ্জীন হল, সপ্ত জমিনের নিচে। অর্থাৎ, যেমনি-ভাবে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অনুরূপভাবে জাহান্নাম সপ্ত যমীনের নীচে একটি স্থান। (তাফসীরে বগবী, ৫৪৮/৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪৮৬, ৪৮৭/৪।
জাহান্নাম থেকে ভয় প্রদর্শন ইবনে রজবের পৃ: ১-৬২ অনুরূপভাবে ইমাম ইবনুল কাইয়ুমের হাদীয়ুল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ, পৃ:৮২-৮৪)।
Leave a Reply