শীর্ষবিন্দু নিউজ: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নত করতে হবে। ট্রানজিট বা করিডোর যে নামেই ডাকা হোক প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে সরকার যোগাযোগ (কানেক্টিভিটি) বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সাত মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে সরকার এ মুহূর্তেই ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর দিচ্ছে না। যোগাযোগ বাড়াতে সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও বেশি কাস্টমস হাউস ও চেকপোস্ট করা হবে। স্থলবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও তাতে কাস্টমস স্থাপন করা হবে। ভারতের চেন্নাই ও গোহাটি রাজ্যে দু’টি উপ হাইকমিশনার খোলা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে বাংলাবান্দা-ফুলবাড়ি বন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপন, বুড়িমারি-চেংরাবান্দা স্থল বন্দরের ভারতীয় বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, আখাউড়া-আগরতলা রেল লিঙ্কের কাজ দ্রুত শেষ করা, আগরতলা-রামগাঁও যোগাযোগ নিয়ে যৌথ আলোচনা শুরু ও ভারতের ফুলবাড়ির রেলপথের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্তি। এছাড়া রোহনপুর-সিন্দাবাদ রেল লিঙ্ক, গুয়াহাটির সঙ্গে আগামী জুনের মধ্যে বিমান চালু, ব্রহ্মপুত্র নদীতে ড্রেজিং করে ভারতে পণ্য রপ্তানি এবং গুয়াহাটি ও চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন স্থাপনের বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে করণীয় ঠিক করতেই মূলত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক, নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ভারতে বাংলাদেশি হাই কমিশনার আহমেদ তারেত করিমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্তের কথাগুলো জানান তোফায়েল আহমেদ। এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ট্রানজিট বা করিডোরের বিষয়ে আমাদের মাইন্ড সেট আছে। তবে আমাদের দরজা বন্ধ করে রাখলে হবে না। আমরা দরজা বন্ধ রাখলেও অন্যরা খুলে দেবে। তিনি বলেন, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ নিজেরা যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। আমাদেরও ভারতের সঙ্গে বড় বাণিজ্য আছে। ভারতের বাজারে তামাক আর অ্যালকোহল ছাড়া সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ দিয়েছে। এটি ব্যবহার করতে হবে।
এজন্য যোগাযোগসহ সব বাধাও দূর করতে হবে। তবে আজকের বৈঠকে ট্রানজিট বা করিডোর দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের বড় বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে। আবার ভারত থেকে তুলাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য আমদানি করা হয়। বাণিজ্য বাড়াতে হলে আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন করতে হবে। কাস্টস হাউস বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বাংলাবান্ধা, ফুলবাড়ি, বুড়িমারি ও চেংড়াবান্ধেসহ সীমান্তবর্তী এলাকার স্থলবন্দর উন্নতি করতে হবে। যেসব এলাকায় চেকপোস্ট নেই, সেখানে চেকপোস্ট স্থাপন করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাণিজ্য বাড়াতে। সেগুলোও দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।তিনি বলেন, শুধু সড়ক-নৌ ও রেলপথে নয়। আকাশ পথেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে, সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত নৌ প্রটোকল কার্যকর করা হবে। গোহাটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। বৈঠকে চেন্নাই ও গোহাটিতে দু’টি উপ হাইকমিশন স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড বসে নেই। তারা নিজেরা যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। আমাদেরও দেশের স্বার্থে, বাণিজ্যের স্বার্থে বসে থাকার সময় নেই। ভিসা জটিলতার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিসা জটিলতা থাকছে না। ব্যবসায়ীরা এখন ৫ বছরের জন্য ভিসা পাচ্ছেন। ভারতও অভিযোগ করে তারা সময়মতো ভিসা পায় না। দু’দেশকেই কাজ করতে হবে। তবে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ যাতে আদান-প্রদান না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানির প্রসঙ্গে টেনে তোফায়েল বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩০ বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে। ২০২১ সালে দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। সার্বিক রপ্তানি দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন ডলার।
কানেকটিভিটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সড়ক, নৌ ও রেল পথে আমরা পণ্য রপ্তানি করতে পারি, সে বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ট্রানজিটের বিকল্প হিসাবে ভারতকে এসব লিঙ্ক দেয়া হচ্ছে কি না- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা (কানেকটিভিটি) বাড়াতে হবে। এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কুনমিং থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত হয়ে সড়ক ব্যবস্থা হবে। তাতে আমরা লাভবান হবো।
তিনি বলেন, করিডোর বলেন বা ট্রানজিট বলেন দ্যাট ইজ নট ইমপরটেন্ট। ইমপরটেন্ট হলো কানেক্টিভিটি। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংযোগ স্থাপন করা। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত এই সংযোগ স্থাপনে চেষ্টা করছে বলেও জানান মন্ত্রী। আমরা যদি আমাদের দরজা বন্ধ করে দেই অন্য জায়গায় তারা দরজা খুলে নেবে। তার মানে এই নয় আমরা বিনা স্বার্থে আমাদের দরজা খুলে দেব, এগুলো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। তোফায়েল বলেন, ট্রানজিট বা করিডোর দেয়া- না নেয়া নয়। ট্রানজিট ও করিডোর নিয়ে আমাদের মাইন্ড সেট আছে। সেই ব্যাপারটা আমরা আলোচনা করেছি।