বিতর্কিত মেড ইন বাংলাদেশ বিজ্ঞাপন প্রচারণা নিয়ে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে সাফাই গেয়েছে আমেরিকান অ্যাপারেলস। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণীর অনাবৃত বক্ষে মেড ইন বাংলাদেশ লিখিত বিজ্ঞাপন নিয়ে সৃষ্ট নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ইরিস এলোনজো। বাংলাদেশীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মানজনক এমন একটি বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করার পরিবর্তে সাফাই গেয়েছেন তিনি।
তার দৃষ্টিতে তরুণী ম্যাকস সাহসী ও আবেদনময়ী। আমেরিকান অ্যাপারেলস ম্যাকসের সাহসিকতায় গর্বিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইরিস এলোনজো বলেন, অতীতের মতো এবারের ক্যাম্পেইন নিয়েও আমেরিকান অ্যাপারেলের বিরুদ্ধে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও আগামী মাসের সংখ্যায় বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভাইস’-এর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সংখ্যায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে টপলেস বাংলাদেশী তরুণীর উন্মুক্ত বক্ষে লেখা মেড ইন বাংলাদেশ বিজ্ঞাপনটি।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে, ম্যাকসের টপলেস বক্ষে মেড ইন বাংলাদেশে লেখার স্টাইল এবং বোতামহীন জিন্স পরিয়ে তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা যৌনতাকে উস্কে দেয়ার শামিল। ইরিস এলোনজো তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ম্যাকসের জন্ম মুসলিম পরিবারে। ঢাকায় জন্ম হলেও চার বছর বয়স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করছেন ম্যাকস। বিজ্ঞাপনটিতে ছবির নিচে তার জীবনের সংক্ষিপ্ত কাহিনী উল্লিখিত রয়েছে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে পরিহিত হাই ওয়েস্ট জিন্স প্যান্টটির বৈশিষ্ট্য। বুঝতে কষ্ট হলেও এটা জিন্স প্যান্টটির বিজ্ঞাপন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় লেখা হয়েছে হাই ওয়েস্ট জিন প্যান্টটি আমেরিকাল অ্যাপারেলসের একটি পণ্য যা ২৩ জন দক্ষ শ্রমিক তৈরি করেছে যাদের প্রত্যেকে মর্যাদাপূর্ণ মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা ও শ্রমিকদের অন্যান্য মৌলিক সুবিধা উপভোগ করছেন। ম্যাকসও ওই শ্রমিকদের মধ্যে একজন।
ইরিস এলেনজো বলেন, তাদের কাছে এমন একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে ম্যাকসকেই যোগ্য মনে হয়েছে। অ্যামেরিকান অ্যাপারেলসের অন্য বিজ্ঞাপনগুলোর মতো এ বিজ্ঞাপনেও বহুমুখী অর্থ রয়েছে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বলতে এখানে মডেলের উৎপত্তিস্থলকে বোঝানো হয়েছে। পাশাপাশি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও এর তাৎপর্য রয়েছে। আর ম্যাকসের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও ভিন্ন। তরুণী ম্যাকস তার নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছেন। তার কাছ থেকে সাংস্কৃতিক প্রত্যাশা কি তা এখানে নগণ্য। এলোনজো বলেন এ বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের শ্রম অধিকারের বিষয়টিও উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, মাত্র এক বছর আগে রানা প্লাজা ধসে ১১৪০ জন তৈরী পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা এ ঘটনাকে বিপর্যয় বলেই মনে করি যার পক্ষে কোনো অজুহাত খাটে না। আর কর্মক্ষেত্রে অনিরাপদ পরিবেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শ্রমিকরা বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি পাচ্ছেন। সমপ্রতি তাদের মাসিক মজুরি বেড়ে ৬৮ ডলার হয়েছে। আর আমেরিকান অ্যাপারেলসের প্রায় ৫ হাজার কারখানা শ্রমিক প্রতি ঘণ্টায় মজুরি পাচ্ছেন ১০ থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত।
তিনি বলেন, অ্যামেরিকান অ্যাপারেলস ১৫ বছর ধরে যে মিশনে এগিয়ে যাচ্ছে তা হলো একজন শ্রমিকও যেন বঞ্চনার শিকার না হন। আমরা কখনোই মেশিনের সামনের মানুষগুলোর জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিই না। অ্যামেরিকান অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা কতটা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং প্রতিষ্ঠানের নারীরা কতটা ব্যক্তিস্বাধীনতা উপভোগ করছে তা আমরা ফুটিয়ে তুলতে চাই। এবং এ বিজ্ঞাপনটির উদ্দেশ্যও তাই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, একজন শ্রমিক মডেল প্রকৃতপক্ষে যেমন ঠিক তেমনটা উপস্থাপন করতেই আমরা ছবিতে কোনো কাজ করি না। কোন মেক আপও দিই না। কোনো কিছু আড়ালে ঢেকে দিই না। ব্যক্তিত্ব এবং প্রকৃত চেহারাটা আমরা উপস্থাপন করতে চাই। আর ম্যাকসের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। মূলত এসব কারণেই কোনো কোনো বিজ্ঞাপনে যৌনতা এসে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। আবার কোনোটিতে যৌনতা আসে না। যেখনে যৌনতা ফুটে ওঠে মিডিয়া সেখানেই ফোকাস করে বলে তিনি দাবি করেন। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান ব্যবহার করে তৈরি করা বিজ্ঞাপনটিকে তেমনই একটি ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন এলোনজো।
সূত্র: ফ্যাশনিস্টা অনলাইন