প্রযুক্তি আকাশ ডেস্ক: ভারতসহ নয়টি দেশের ৮০ কোটির বেশি মানুষকে বিনা মূল্যে ইন্টারনেটের কিছু মৌলিক সেবার আওতায় আনতে পেরেছে ইন্টারনেট ডট ওআরজি। গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এই তথ্য জানিয়েছেন। ইন্টারনেট ডট ওআরজি হচ্ছে, বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে জাকারবার্গের নেওয়া একটি প্রকল্প।
ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্ল্যাটফর্ম থেকে বেসিক কিছু ওয়েবসাইটে বিনা মূল্যে ব্রাউজার করার সুযোগ পান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এতে ডেটা খরচ লাগে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের গতকালের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। ফেসবুক, স্যামসাং ও কোয়ালকমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু করেছে।
ইতিমধ্যে জাকারবার্গের নেতৃত্বে গৃহীত এই উদ্যোগটি বিতর্কের মুখে পড়েছে। জাকারবার্গের এই উদ্যোগটি নিরপেক্ষ ইন্টারনেট ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে অনেক প্রতিষ্ঠান এর বিরোধিতা করছে। ভারতে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের সঙ্গে চুক্তি করেছে ফেসবুক। এতে ইন্টারনেটে ডট ওআরজি সেবার আওতায় মোট ৩৩টি ওয়েবসাইট বিনা মূল্যে ব্রাউজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
তবে নিরপেক্ষ ইন্টারনেটের পক্ষে আন্দোলনকারীরা এই উদ্যোগের বিপক্ষে সোচ্চার। তাঁদের দাবি হচ্ছে, ইন্টারনেট ডট ওআরজির কারণে নেট নিরপেক্ষতা থাকছে না। নেট নিউট্রালিটি বা ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা হচ্ছে একটি ধারণা, যাতে সব ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে একইভাবে বা সমানভাবে দেখা হবে।
ইন্টারনেট সবার জন্য সমান। এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে সমানভাবে সব ওয়েবসাইট দেখার সুযোগ থাকতে হবে, তা না হলে ইন্টারনেট নিরপেক্ষ থাকবে না। ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের বার্তা দিচ্ছে।
সম্প্রতি ফেসবুকের এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের আয় ঘোষণার সময় জাকারবার্গ বলেন, সারা বিশ্বের মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি নামের আমাদের এই উদ্যোগের গতি বেড়েই চলেছে। আমরা নয়টি দেশে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনা খরচে বেসিক ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনতে পেরেছি। শুধু এই প্রান্তিকেই ভারত, কলম্বিয়া, ঘানা, গুয়তেমালা ও ফিলিপাইনে এই সুবিধা চালু হয়েছে।
জাকারবার্গ বলেন, এর আগে কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি এমন ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ অনলাইনে আসার জন্য ইন্টারনেট ডট ওআরজি ব্যবহার করছেন। এ বছর আমরা আরও বেশি মানুষকে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারব। নেট নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও জাকারবার্গ বলছেন, নেট নিরপেক্ষতা ও ইন্টারনেট ডট ওআরজির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তিনি ইন্টারনেট ডট ওআরজির পক্ষে কথা বলেছেন। তাঁর মতে, একেবারেই ইন্টারনেটের বাইরে থাকার চেয়ে বৈষম্যপূর্ণ ইন্টারনেট থাকাও ভালো। ভারত যেভাবে অধিক মানুষকে ইন্টারনেটে আনতে যাচ্ছে তাতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি ভারতের সেই প্রচেষ্টার সঙ্গে যায়।
মার্ক জাকারবার্গ এর আগে মুক্ত ইন্টারনেটের কথা বললেও এবারে ভারতের নেট নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গটির বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার বিষয়টির সঙ্গে অধিক মানুষকে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আনার বিষয়টিকে কোনো সংঘর্ষ হবে না। আমরা কথনও মানুষকে অন্য ওয়েবসাইট দেখতে নিষেধ করছি না বা আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা নিচ্ছি না। ফেসবুকের লোক বেড়েছে, মুনাফা কমেছে
গত দুই বছরের মধ্যে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ফেসবুকের আয় কমে গেছে আর গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় বেড়েছে। তবে ফেসবুক ব্যবহারকারীও বেড়েছে হু হু করে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ১৩ শতাংশ হারে মাসিক ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়েছে। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারী সংখ্যা পৌঁছেছে ১৪৪ কোটিতে যার মধ্যে ৮৭ শতাংশ স্মার্টফোন থেকে ফেসবুকে ঢোকেন।