শীর্ষবিন্দু নিউজ: রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী।
আজ এ সংক্রান্ত রিটের রায় ঘোষণা করা হয়। এতে দলটির নিবন্ধনকে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে ভিত্তিতে তিনজন বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়ে ওঠার মধ্যেই বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।
শুধু রায়ের অংশই পড়ে শোনানো হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় পরবর্তীতে প্রকাশ হবে। রায়ে বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন আইন কর্তৃত্ববর্হিভূত। তাই তাদের নিবন্ধনের কোন আইনী ভিত্তি নেই। রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ি আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে জামায়াতকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়। যে কারণে নিবন্ধনের বিষয়টি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে আপিল বিভাগে। এদিকে রায় স্থগিত করার আবেদন জানিয়েছে জামায়াতের আইনজীবীরা।
বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেন, বাই মেজরিটি, রুল ইজ মেইড অ্যাবসিলিউট অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশেন গিভেন টু জামায়াত বাই ইলেকশন কমিশন ইজ ডিক্লিয়ার্ড ইলিগ্যাল অ্যান্ড ভয়েড। রায়ের বিস্তারিত পরে প্রকাশ করা হবে বলেও আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আলোচিত এ রায় উপলক্ষে আগেই হাই কোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সংবাদকর্মী ও আইনজীবীরা রায় শুনতে এজলাসে জড়ো হন।
রায়কে ঘিরে আদালত এলাকায় সকাল থেকে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করা হয়। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক। গত ১২ই জুন হাইকোর্ট রিটটি শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে।
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’র সভাপতি হুমায়ূন কবির, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হাসানসহ ২৫ ব্যক্তি ২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্চ করে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৭শে জানুয়ারি রুল জারি করে। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সংশি¬ষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১) (বি) (২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। গত এপ্রিলে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এ রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান এবং ইসির পক্ষে সিনিয়র এডভোকেট মহসিন রশিদ শুনানি করেন। অন্যদিকে, জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন। শুনানিতে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র ইসলামের প্রথম সংবিধান মদিনা সনদ, বাংলাদেশের সংবিধান ও জনগণের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা কাদিয়ানিদেরকে মুসলমান মনে করে না। বিভিন্ন সুফী সাধকদেরকে মুসলিম বলে মনে করে না।
অন্যদিকে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুক্তি দেখান, অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। তাই রিট আবেদনটি চলতে পারে না। দেশের আরও অনেক রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে একইধরনের বিধান থাকলেও ওইসব দলের বিরুদ্ধে কোন রিট আবেদন করা হয়নি। জামায়াতের গঠনতন্ত্রে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন কিছু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
আর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রায়ের পর জামায়াতের আইন সম্পাদক ও এ মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীকে যে নিবন্ধন দিয়েছে তা অবৈধ। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালে ৩৮টি দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
Leave a Reply