জহিরুল ইসলাম : কাল ঈদ। রবিন আর মিতুর মনে আনন্দ আর ধরে না।
ছোট চাচা ঈদ করতে দেশে এসেছেন। সঙ্গে চাচি আর চাচাত ভাইবোন দিবা আর রাতুলও আছে। ছোট চাচি সবার জন্য অনেক জামাকাপড় এনেছেন। রবিন আর মিতুর জন্য দুটো করে জামাকাপড় এনেছেন তিনি। বাবার জন্য এনেছেন পাজামা-পাঞ্জাবি। মায়ের জন্য শাড়ি। বাবাও ওদের কিনে দিয়েছেন অনেক কিছু। রবিন, মিতু, দিবা আর রাতুল অপেক্ষা করছে কখন রাতশেষে খুশির ঈদের দিন আসবে।
ঈদের দিনে ওরা কোথায় কোথায় বেড়াতে যাবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। সকালে উঠেই গোসল করে নতুন জামাকাপড় পরতে হবে। তারপর ছেলেরা যাবে ঈদগাহে নামাজ পড়তে, আর মেয়েরা মাকে নাশতা তৈরিতে সাহায্য করবে। এরপর বড়দের সালাম করে সেমাই-নাশতা খেয়ে শুরু হবে বেড়ান। পড়শিদের সবার বাড়িতে তো যেতেই হবে, আরও যেতে হবে কয়েকজন আত্মীয়ের বাড়িতে।
পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙে মিতুর। ঘুম ভাঙতেই মিতু একটা হুলস্থুল বাঁধিয়ে দেয়। হইচই করে সবাইকে ডেকে তোলে সে। রবিনটা আবার একটু অলস। সকালে কিছুতেই বিছানা ছাড়তে চায় না সে। রবিনকে জাগিয়ে তুলতে তার গায়ে পানি ঢেলে দেয় রাতুল। অন্যদিন হলে অবশ্য গায়ে পানি দেওয়ায় প্রচ- ক্ষেপে যেত রবিন। কিন্তু আজ ঈদের দিন বলেই হয়তো সে রাগল না। তাছাড়া রাতুলরা ওদের মেহমান। ওদের সঙ্গে রাগও করা যায় না। একটু মুচকি হেসে রবিন উঠে পড়ল বিছানা ছেড়ে।
শুরু হল ঈদের আয়োজন।
রবিন আর রাতুল তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে নতুন জামাকাপড় পরতে লাগল। রাতল জিজ্ঞেস করল, “আগে কোন জামাটা পরব?”
রবিন বলল, “জামা না, এখন আমরা পাজামা-পাঞ্জাবি-টুপি আর নতুন স্যান্ডেল পরব। ঈদের নামাজ পড়ে সবার সঙ্গে কোলাকুলি করে তারপর নতুন প্যান্ট-শার্ট পরব। বিকেলে আবার অন্য জামাকাপড় পরব।”
রাতুল বলল, “তারপরও তো আমাদের আরও অনেক নতুন কামাকাপড় থেকে যাবে। সেগুলো কখন পরব?”
“সেগুলো না হয় কাল পরব। চল আগে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে নামাজ পড়ে আসি।” বলল রবিন।
দিবা আর মিতু মুখ ধুয়েই গেল রান্নাঘরে। মা-চাচিরা সেখানে জর্দা, ফিরনি, সেমাই রান্না করছেন। পোলাও-মাংস রান্না করছেন। মিতু আর দিবা আসার আগেই অবশ্য রান্নাবান্না প্রায় শেষ।
দিবাকে দেখেই মা বললেন, “ফিরনিটা একটু খেয়ে দেখ তো মা, মিষ্টি হয়েছে কি না।”
মিতু বলল, “চাচি, আমরা দুজন তোমাদের কী সাহায্য করতে পারি বল।”
চাচি বললেন, “আমাদের সাহায্যের দরকার নেই। তোমরা গোসল করে নতুন জামাকাপড় পরো। আনন্দ-ফুর্তি করো। আজকের দিনটা তোমাদের মতো ছোটদের জন্য শুধুই আনন্দ করার দিন।”
চাচির কথা শুনে মিতু আর দিবা তাড়াতাড়ি ছুটল গোসল করতে। নতুন জামাকাপড় পরতে হবে। বেড়াতে যেতে হবে।
নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল-টুপি পরে কেবল দরজা দিয়ে নামতে যাবে রবিন আর রাতুল, এমন সময় তুহিনের চোখ পড়ল একটা বাচ্চা ছেলের দিকে। ছেলেটি রবিনদের বাসার সামনে ভিক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তার গায়ে কোনো জামা নেই। পরনে ময়লা-ছেঁড়া একটা হাফপ্যান্ট। তুহিনকে দেখেই সে বলল, “ঈদের নাশতা দেবেন?”
ছেলেটিকে দেখে তুহিন আশ্চর্য হয়ে গেল। এতটুকু ছেলে ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় না পরে নাশতা খেতে বেরিয়ে পড়েছে!
তুহিন বলল, “এই ছেলে, ঈদের দিনে তুমি খালি গায়ে কেন? নতুন জামা পরে এসো।”
রবিন বলল, “ওরা তো অনেক গরিব, পুরনো জামাকাপড়ই নেই ওদের; নতুন জামা পাবে কোথায়?”
রাতুল বলল, “তাই বলে ঈদের দিনে জামাকাপড় না পরেই বাইরে চলে আসবে?”
এমন সময় রবিনের বাবা সেখানে এলেন। সব শুনে তিনি বললেন, “ওরা আসলে এতটাই গরিব যে, ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় পরার স্বপ্নই দেখে না ওরা। সামান্য একটু খেতে পেলেই খুশি হয়।”
রাতুল বলল, “কিন্তু এইটুকু একটা বাচ্চার মুখেই যদি আমরা হাসি ফোটাতে না পারি, তাহলে খুশির ঈদ হল কী করে?”
রবিন বলল, “কী করতে চাস তুই?”
রাতুল বলল, “আমার তো অনেক নতুন জামাকাপড়। তা থেকে একটা ওকে দিয়ে দেব।”
রবিন বলল, “আমি ওকে একটা নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি আর একজোড়া স্যান্ডেল দিতে চাই।”
নতুন জামাকাপড় পরিয়ে নাশতা খেতে দেওয়া হল গরিব ছেলেটিকে।
নতুন জামাকাপড় আর পেট ভরে নাশতা খেতে পেয়ে ছেলেটি খুব খুশি হল। ওর খুশি দেখে রবিন আর রাতুলও খুব খুশি হল। তারপর ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে মজা করতে করতে সবাই ঈদগাহে গেল নামাজ পড়তে।
Leave a Reply