শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: রাশিয়া সম্পৃক্ততার বিতর্কের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। এক মাসেরও কম সময়ে তিনি এ পদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। দায়িত্বের মেয়াদ এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি পদ থেকে সরে গেলেন।সোমবার রাতে জমা দেয়া পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি পদত্যাগ করছি।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০শে জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে গেছে বহুল আলোচিত বেশ কিছু ঘটনা। তার অন্যতম মাইকেল ফ্লিনের পদত্যাগ। এর আগে ৭টি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন না করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরখাস্ত করেন তার ভারপ্রাপ্ত এটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটসকে।
ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করা হয় আদালতে। আদালত শেষ পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞাকে স্থগিত করেছেন। শোনা যাচ্ছে শিগগিরই ট্রাম্প প্রশাসন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো নতুন কোনো পদক্ষেপ নেবেন। এরই মধ্যে সোমবার রাতে পদত্যাগ করেন মাইকেল ফ্লিন। এর আগে রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়ে যে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় ট্রাম্প প্রশাসনকে গত মাসে সতর্ক করেছে।
তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ আছে মাইকেল ফ্লিনের। এমনই আলোচনা, বিতর্কের মধ্যে পদত্যাগ করলেন তিনি। তার পদত্যাগপত্রের একটি কপি পেয়েছে সিএনএন।
তাতে ফ্লিন লিখেছেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার ফোন আলাপ নিয়ে যে অসম্পূর্ণ তথ্য এসেছে সে বিষয়ে আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং অন্যদেরকে জানিয়েছি। এ জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারা তা গ্রহণ করেছেন। দেশের ও ও মার্কিনিদের বিশেষ এই পথচলাকে সম্মানীত করতে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি।
আমি জানি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের শক্তিশালী নেতৃত্বে ও তাদের চমৎকার টিম যেভাবে সাজানো হয়েছে তারা ইতিহাসে জায়গা করে নেবেন এবং ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মহৎ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এক মাসেরও কম সময় দায়িত্বে থাকার পর পদত্যাগের এমন ঘটনা যুুক্তরাষ্ট্রে বিরল। আধুনিক ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের একজন সিনিয়র উপদেষ্টার এত অল্প সময় দায়িত্ব পালনের অন্যতম ইতিহান হয়ে রইলেন ফ্লিন।
ওদিকে বিভিন্ন সূত্র সিএনএনকে বলেছে, অন্তর্বর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পারেন জেনারেল কিথ কেলোগ। সম্প্রতি তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে প্রশাসনের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হতে পাওেরন কেলোগ, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস অথবা সাবেক ভাইস এডমিরাল বব হাওয়ার্ড। সিএনএন লিখেছে, মাইকেল ফ্লিনের অকস্মাৎ বিদায় নেয়াকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চতর পদগুলোতে এলোমেলো অবস্থা প্রকাশ করে দিয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের তিন সপ্তাহ চলছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এরই মধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এখন ফ্লিনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দীর্ঘ সময়ের ও ঘনিষ্ঠ একজন উপদেষ্টার সাহচর্য হারালেন। কারণ, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকে পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন মাইকেল ফ্লিন।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। এতে বলা হয়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে (ওবামা প্রশাসনের দেয়া সর্বশেষ) অবরোধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মাইকেল ফ্লিন। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে এমন আলোচনা বিদেশী কোনো সরকারের সঙ্গে তিনি করতে পারেন না। এটা সেখানে অবৈধ। এমন রিপোর্ট প্রকাশ হলে মাইকেল ফ্লিন তার সত্যতা প্রত্যাখ্যান করেন নি।
তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অবরোধ নিয়ে ফ্লিনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি বলে টেলিভিশন সাক্ষাতকারে জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হোয়াইট হাউজের বেশ কয়েক জন সিনিয়র উপদেষ্টা। ওদিকে ফ্লিন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার খবর প্রত্যাখ্যান না করায়, মাইক পেন্স ও ওইসব উপদেষ্টা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যান। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বলেন যে, মাইকেল ফ্লিন অবশ্যই মাইক পেন্স ও অন্যদের ভুলপথে পরিচালিত করেছেন।
হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তারা গত শুক্রবার সিএনএনকে বলেছেন, গোপন বিষয় কেবল বেরিয়ে আসা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে আরো অসন্তোষ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া এক পরাশক্তি। সে দেশের রাষ্ট্রদূতের ফোনকল নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পর্যবেক্ষণ করে। সেই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ নিয়ে মাইকেল ফ্লিনের আলোচনার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, মাইকেল ফ্লিন একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানও ছিলেন। তার মতো ব্যক্তি তো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার বিষয় জানেনই। তাহলে কেন তিনি এমন স্পর্শকাতর ইস্যু ফোনে আলোচনা করতে গেলেন! যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার সিএনএনকে নিশ্চিত করেছেন যে, মাইকেল ফ্লিন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলায়েকের মধ্যে অবরোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তারা আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ফ্লিন ও কিসলায়েকের মধ্যে ওই ফোনকল হয় ডিসেম্বরে। কিন্তু এ ফোনকলের খবর যখন প্রকাশিত হলো তখন বর্তমানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ১৫ই জানুয়ারি সিবিএস নিউজকে বলেছিলেন, অবরোধ নিয়ে কিসলায়েকের সঙ্গে কোনো কথা বলেন নি ফ্লিন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে (ওবামা প্রশাসন) যে অবরোধ দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা করেন নি তারা। কিন্তু শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র সিএনএন’কে বলেছেন, অবরোধ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেন নি ফ্লিন।