রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২২

মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে অবরোধ বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ

মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে অবরোধ বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: মিয়ানমারের সুনির্দিষ্ট কিছু সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনায় এমন তথ্য পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাদের নৃশংসতার জবাবে শাস্তি হিসেবে এমন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে তারা। ওই সঙ্কটে আ ছাড়া শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আরো অনেক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তারা। তবে সূত্রগুলো বলেছেন, এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নি।

ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস আপাতত বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ থাকতে পারে। তাদের মধ্যে সহিংসতা কবলিত রাখাইন রাজ্যে সাহায্য বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার জবাবে পশ্চিমাদের ওপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলো থেকে তাদেরকে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যত ফল শূন্য। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় নি। শুধু আলোচনা, নিন্দা, সমালোচনার মধ্যে সীমিত থেকেছে বিষয়টি। সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি।

সেনাবাহিনীর ওপর তার যে নিয়ন্ত্রণ নেই সে কথাও বুঝে গেছে পশ্চিমা সহ সারা দুনিয়া। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লেখা সংবিধানের অধীনেই তাকে ‘পঙ্গু’ করে রাখা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ১৬ই অক্টোবর মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পরিষদ। তবে তার আগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো অবরোধ ঘোষণার দৃশ্যত সম্ভাবনা নেই।

ডেনমার্কের উন্নয়ন সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রী উলা টোরনায়েস রয়টার্সকে বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটটি ওই আলোচনায় আনার জন্য কাজ করেছে কোপেনহেগেন। সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো চাপ সৃষ্টির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ওদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দু’জন কর্মকর্তা, যারা মিয়ানমার ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত তারা বলেছেন, মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হ্লাইং ও বেশ কিছু শীর্ষ জেনারেলের বিরুদ্ধে টার্গেটেড অবরোধ দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। তাদের সঙ্গে মার্কিনিদের ব্যবসা বন্ধ করা হবে। এ ছাড়া রয়েছে আরো বেশ কিছু শাস্তিমুলক ব্যবস্থা।

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। ইয়াঙ্গুনে অবস্থান করা ইউরোপীয় একজন কূটনীতিক বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্কটের জবাবে পশ্চিমা দেশগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে।

তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে কমান্ডার ইন চিফের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, প্রথমেই আলোচনার দুয়ার খোলা রেখে প্রতীকী শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাপ্রধানকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে ইউরোপ সফরে। গত বছর তিনি ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করেছিলেন।

তবে পশ্চিমা কূটনীতিকরা স্বীকার করেন, তাদের জন্য মিয়ানমারে সুবিধার দুয়ার সীমিত। তুলনামুলকভাবে এক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পায় চীন। কারণ, ১৮ মাস আগে অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার সময় থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক উষ্ণ।

সেক্ষেত্রে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুব সামান্য। আবার কূটনীতিকরা এ বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বলেছেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কড়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিলে তাতে অং সান সুচির সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিদ্যমান উত্তেজনা আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।

ওদিকে রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য মিয়ানমারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারের ওপর নজর রাখেন ব্রাসেলস ভিত্তিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কূটনীতিক বলেন, আমরা মিয়ানমারের ওপর কড়া রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারি।

আমরা সেখানে যেমন মানবিক সাহায্য দিচ্ছি, তেমনি উন্নয়নে সাহায্য দিচ্ছি। আমরা তাদেরকে বলতে পারি, সেখানে যদি নিরাপত্তা সহ সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন না ঘটে তাহলে আর বিনিয়োগ করবে না ইউরোপীয়ান কমিশন। এমনিতেই সেখানে অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা শাসন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনে। বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে কিছু ক্ষমতা দিয়ে তারা সংবিধান সংশোধন করে। এতে সেখানে গণতন্ত্র ফিরে আসার পথ তৈরি হয়।

আর তাই জেল থেকে মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন অং সান সুচি। এর ফলে মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে চলা শুরু করেছে বলে মিয়ানমারের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহার করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

কিন্তু ১৯৯০ এর দশক থেকে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। ওদিকে মিয়ানমারের ওপর থেকে বেশির ভাগ অবরোধ গত বছর প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারাও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখে।

নভেম্বরের প্রথম অর্ধাংশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরে আসার কথা রয়েছে। তার আগেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নেয়ার আশা করছে ওয়াশিংটন।

এমনটা জানিয়েছেন ওয়াশিংটন ভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা। এর প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কঠোর বার্তা দিতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সতর্কতা আছে। আছে আতঙ্ক কারণ, খুব কড়া সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তাতে লাভবান হতে পারে চীন।

তারা মিয়ানমারের সঙ্গে এই ফাঁকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে বসবে। তাই নতুন করে বড় আকারে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসনে খুব কমই সমর্থন রয়েছে। তবে এ ইস্যুতে হোয়াইট হাউজ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024