শীর্ষবিন্দু নিউজ: ন্যূনতম বেতন আট হাজার টাকা করার দাবিতে আজ বুধবার পঞ্চম দিনের মতো গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকেরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেছেন। গাজীপুরে শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত: কম মজুরিতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গামেন্টস শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করা নিয়ে সম্প্রতি বিবিসি‘র ক্যামেরায় গোপনে ধারণ করা খবর প্রকাশের পর সার বিশ্বব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অথচ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মালিকপক্ষ বা তাদের অনুসারিরা বলছেন। কাজের সাথে সংগতি রেখে শ্রমিকদের মজুরি দেয়া ও কাজের সময় ঠিক রাখা হচ্ছে। গতকাল সিপিডি এক গোলটেবিল বৈঠক আলোচনায় শ্রমিকদের নূনতম মজুরি ঠিক করে দেয় ৬৬৭৫ টাকা।
গাজীপুর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ন্যূনতম বেতন আট হাজার টাকা করার দাবিতে আজ বুধবার পঞ্চম দিনের মতো গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ি ও কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। এ অবস্থায় এসব এলাকার শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে এখানকার কারখানাগুলো চালু করা হয়। কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার কারখানাগুলোতে সকাল সোয়া আটটার দিকে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এর কিছুক্ষণ পর চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিনসসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবাহ এলাকায় মাকস সোয়েটার কারখানা, মিম নুন নিট ওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে উপজেলার সফিপুর বাজারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ি এলাকায় কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকেরা ভাঙচুর করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি এলাকায় শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করার দাবিতে সদর উপজেলার ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক এলাকায় আজ সকালে পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ, শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কয়েক হাজার পোশাকশ্রমিক শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের ধাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে শ্রমিকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয়টি রাবার বুলেট ও একটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে পুলিশ।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকেরা একই স্থানে জড়ো হন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।