শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: প্রকৌশল কোম্পানির এসএনসি–লাভালিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি–মামলার বিচারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় কানাডা সরকারে সংকট ক্রমশ ঘনিভূত হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকটি মাস বাকি। ঠিক এমন সময়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ছেড়ে গেলেন আরো একজন মন্ত্রী।
এতে আরো বড় একটি আঘাত এসে পড়লো তার ওপর। এসএনসি লাভালিন নামের প্রতিষ্ঠানের একটি ঘুষ সংক্রান্ত মামলায় সরকার সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন–রেবোল্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ আছে।
এমন অভিযোগে প্রথমে তিনি পদত্যাগ করেন। তার পথ ধরে আরো একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। তিনি হলেন ট্রেজারি বোর্ড প্রেসিডেন্ট জেন ফিলপট। সম্প্রতি তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি সরকারি খরচ সংক্রান্ত দায়িত্বে ছিলেন।
এতে একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগের পদ বেছে নিচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডার বিচারমন্ত্রীর পদত্যাগের পর এবার সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির ট্রেজারি বোর্ডের চেয়ারম্যান। বিবিসি, রয়টার্স, আল–জাজিরা
চলমান একটি বিচার প্রক্রিয়ায় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে ইতোমধ্যেই তার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে দেশটির বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে। ক্ষমতাসীন লিবারেল সরকারের তৃতীয় মন্ত্রী জেইন ফিলপট ট্রুডো সরকারের ওপর আস্থা হারিয়েছেন বলে সোমবার তার পদত্যাগ পত্রে জানিয়েছে।
ট্রুডোর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সরকারের জবাবে সন্তুষ্ট নই, সরকারের এমন অবস্থানে আমি প্রায় বিপর্যস্ত। তাই আমাকে অবশ্যই মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করার পর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ফিলপট।
এদিকে ফিলপটের পদত্যাগের বিষয়ে ট্রুডো কোন কারণ উল্লেখ্য না করেই বিষয়টি জানা আছে বলে মন্তব্য করেছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারিও কানাডা সরকারের আরো একজন মন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া জেরাল্ড বাটস প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর শীর্ষ সহকারী।
ট্রুডো সরকারের এমন দু’জন শক্তিধর নারী মন্ত্রী পদত্যাগ করায় তিনি বড় রকমের ঝুঁকিতে পড়েছেন। জনমত জরিপ বলছে, সামনের নির্বাচনে তিনি হেরে যেতে পারেন। ফলে ট্রুডোর সামনে এক অশনি সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে এসব ঘটনাকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে জেন ফিলপিট বলেছেন, রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার যেভাবে মোকাবিলা করছে তাতে তিনি সরকারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। সরকারি কর্মকর্তারা সাবেক আইনমন্ত্রী জোডি উইলসন–রেবোল্ডের ওপর যেভাবে অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগে সরকারের জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফিলপিট।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সময়ে সেখানে নির্মাণ কাজের কন্ট্রাক্ট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে এসএনসি লাভালিন গ্রুপ। এক্ষেত্রে তারা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। ঘুষ দেয়। এ নিয়ে মামলা চলছে।
সেই মামলা থেকে এসএনএসি লাভালিনকে রক্ষার জন্য সাবেক ওই আইনমন্ত্রীর ওপর সরকার থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক মহলে তখন পদত্যাগ করেন উউলসন–রেবোল্ড।
ফিলপিট এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, দুঃখজনক হলো, এ বিষয়টিতে সরকার যেভাবে মোকাবিলা করেছে এবং তারা যেভাবে এ ইস্যুতে জবাব দিয়েছে তাতে আমি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। তাই আমি সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাকে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতেই হবে।
এ সময় টরোন্টোতে লিবারেল পার্টির একটি র্যালিতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ফিলপিটের পদত্যাগের খবরে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, তিনি বুঝতে পারছেন কেন ফিলপিট বিদায় নিয়েছেন।
ট্রুডো বলেন, এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। তবে কি কারণে ফিলপিট পদত্যাগ করেছেন তার সরাসরি কোনো উত্তর তিনি দেন নি। মন্ত্রীপরিষদে দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি ফিলপিটের প্রশংসা করেন। তাকে ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, এর আগে ১২ই ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেন উইলসন রেবোল্ড। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফিলপিট।