শীর্ষবিন্দু নিউজ: বাংলাদেশসহ ছয় দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসার আগেই তিন হাজার পাউন্ড জামানত রাখার পরিকল্পনা তীব্র সমালোচনার মুখে বাতিল করেছে ব্রিটেন। যা চলতি মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
গত জুন মাসে এই তিন হাজার পাউন্ডের বন্ড ভিসা সিস্টেম হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে চালুর ব্যাপারে পার্লামেন্টে ঘোষণা করেছিলেন। এর পর থেকে ভারতীয় কনফেডারেশন বিজনেস এসোসিয়েশন, চেম্বার অব কমার্সের ব্যাপক আপত্তির মুখে পড়ে এই সিস্টেম। কোয়ালিশন সরকারের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার নিক ক্লেগ যিনি সর্বপ্রথম এই আইডিয়া ( ১০০০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত ) উপস্থাপন করেছিলেন, সেই নিক ক্লেগ যখন ঘোষণা করে বসেন, তিনি এই বন্ড ভিসা সিস্টেম কে ব্লক করে দেয়ার উদ্যোগ নিবেন, তখনি থেরেসা মে পিছু হটতে বাধ্য হন।
থেরেসা মে পার্লামেন্টে স্বীকার করেছেন, বন্ড ভিসা সিস্টেম খুব একটা ভালো উদ্যোগ নয়।এর আগে থেরেসা মে পার্লামেন্টে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলো বাংলাদেশও যা পরে বাদ দেয়া হয়, প্রভৃতি দেশের জন্য ভিজিট বা ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে তিন হাজার বন্ড ভিসা সিস্টেম চালুর নিয়ম করা হয়, যা এই মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো। এতে বলা হয়েছিলো, উপরোক্ত দেশের নাগরিকেরা ব্রিটেন ভ্রমণ এসে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও আর দেশে ফিরে যাননা। তাই তাদেরকে দেশে ফিরে যাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই বন্ড ভিসা অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের ভিতরে ফিরে না গেলে জামানতের এই টাকা হারানোর নিয়ম চালু করতে যাচ্ছিলো, বর্তমানে যা আর কার্যকর হচ্ছেনা বলে হোম অফিসের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।
তবে ওই পরিকল্পনা বাতিলের কথা জানিয়ে রোববার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অবৈধ অভিবাসন কমিয়ে আনতে পরীক্ষামূলকভাবে এই বন্ড ব্যবস্থা চালুর কথা ভেবেছিল সরকার। তবে আমরা এ বিষয়ে আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঠিক কি কারণে ব্রিটেন পিছু হটলো- সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। তবে উপ প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের আপত্তির কারণেই শেষ মুহূর্তে বন্ড চালুর প্রস্থাবটি আটকে যায় বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবরে ইংগিত দেয়া হয়েছে।
ব্রিটেনের হোম সেক্রেটারি টেরেসা মে অবশ্য সে সময় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তার নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী প্রতি বছর ব্রিটেনে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ১ লাখের মধ্যে নামিয়ে আনতে চান। নতুন এই বন্ড ব্যবস্থা সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে। এর আগে সাবেক লেবার পার্টি সরকারও এ ধরনের একটি বন্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করে এবং ব্যাপক সমালোচনার মুখে পিছিয়ে যায়। বিক্ষোভের মুখে কানাডা সরকারের একটি চেষ্টাও কয়েক বছর আগে ভেস্তে যায়। ব্রিটেন সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের প্রায় ২২ লাখ ভ্রমণ ভিসা দেয়।
চলতি বছরের মার্চে ভিসা বন্ড চালুর ওই পরিকল্পনা জানিয়ে ব্রিটিশ হোম অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই ছয় দেশের নাগরিকরা ব্রিটিশ ভিসার অপব্যবহার করেন বেশি। এ কারণে এ দেশগুলোকেই পরীক্ষামূলক এই বন্ডের আওতায় আনা হবে। সাফল্য পেলে তা ধীরে ধীরে কার্যকর করা হবে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও। এদিকে হোম অফিস কর্তৃক গো হোম অর ফেইস এরেস্ট-শীর্ষক প্রচার ও গণ হারে ক্যাপিটা কর্তৃক টেক্সট ম্যাসেজ প্রেরণ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে মাত্র দু সপ্তাহ আগে এই এডভার্টাইজও বাতিল করে দেয় হোম অফিস।
গত বছর ২ লাখ ৯৬ হাজার ভারতীয়, ১ লাখ ১ হাজার নাইজেরীয়, ৫৩ হাজার পাকিস্তানি, ১৪ হাজর বাংলাদেশি ও ১৪ হাজার শ্রীলঙ্কানকে ব্রিটেনে ৬ মাসের ভ্রমণ ভিসা দেয়া হয়। এর মধ্যে কতোজন ভিসার মেয়াদ শেষে দেশে ফেরেননি তার সঠিক পরিসংখ্যান ব্রিটিশ হোম অফিস প্রকাশ না করলেও কমনওয়েলথভুক্ত অশ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এসব দেশকেই ভিসার অপব্যবহারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, যা নিয়ে পরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ব্রিটেনকে। এরই প্রেক্ষিতে এই মাস থেকে চালু হতে যাওয়া ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন বন্ড ভিসা শেষ পর্যন্ত বাতিল করতে বাধ্য হলো ব্রিটিশ কোয়ালিশন সরকার।