মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০১:৫৭

দলীয়করণে ক্ষতি রাষ্ট্রেরই: প্রশাসনে পদোন্নতির হিড়িক

দলীয়করণে ক্ষতি রাষ্ট্রেরই: প্রশাসনে পদোন্নতির হিড়িক

দুর্নীতি আর অনিয়মের মধ্যে আইনত পার্থক্য বেশি হলেও কার্যত ফলাফল একই। উভয়ই স্বাভাবিকতা ও ভারসাম্য নষ্ট করে। প্রশাসনে ঢালাও পদোন্নতির ফলে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, তাকে দুর্নীতি বলা না গেলেও অনিয়ম বলতে হবে। নাম যা-ই হোক না কেন, এটা রাষ্ট্রের জন্য অশুভ ব্যাপার। গতকাল শুক্রবারের প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম হয়ে এসেছে ঢালাও পদোন্নতির বিষয়টি। প্রশাসনের মধ্যম স্তরের পদগুলোয়

যা থাকার কথা, তার দ্বিগুণের মতো কর্মকর্তা আছেন এবং তা হয়েছে গত পাঁচ বছরে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের বেলায় এই ভারসাম্যহীনতা সবচেয়ে প্রকট। এক হাজার ৩৬৭ পদের বিপরীতে এখন কর্মকর্তার সংখ্যা দুই হাজার ৫৫৪। প্রশাসনকাঠামো শিকলের মতো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। এর একটি স্তরে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলে সমগ্র প্রশাসনেই তার প্রভাব পড়ে। প্রশাসনের আদর্শ মডেল পিরামিডের বদলে তৈরি হয়েছে পেটমোটা মডেল।

পদ সৃষ্টি না করেই পদোন্নতিকে দলীয়করণ ছাড়া আর কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। এতে দলীয় সরকার উপকৃত হলেও রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ প্রশাসনের গতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হলে দক্ষতাও হ্রাস পায়। এভাবে যাঁরা পদোন্নতি পাচ্ছেন ও পাবেন, তাঁদের সবাইকে প্রাধিকার অনুসারে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না। পদোন্নতি পেলেও ওপরের পদাধিকারীরা অবসরে যাওয়া পর্যন্ত এঁদের অনেকেই আগের পদে কাজ করে যেতে বাধ্য হবেন। দ্রুত অনেককে পদোন্নতি দেওয়ায় নিম্নস্তরেও ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম আলোর সংবাদে যেমন বলা হয়েছে, সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) ৪৮৭টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে ১৪৬টি পদ শূন্য। মাঠ প্রশাসনে স্থবিরতার এটাও অন্যতম কারণ।

পদোন্নতির বেলায় দলীয় পক্ষপাত যদি নির্ধারক হয়, তাহলে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা কাজে নিরুৎসাহিত হবেন। প্রশাসনের শৃঙ্খলা ও অখণ্ডতার ক্ষতি হবে। ইতিমধ্যে বিএনপির আমলে জেলা প্রশাসক হিসেবে যাঁরা ছিলেন, সরকার তাঁদের পদোন্নতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে চললে বর্তমানে যাঁরা সুবিধা পাচ্ছেন, ভবিষ্যতে তাঁদেরও খেসারত দিতে হতে পারে। প্রশাসনে এভাবে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি বিভাজন প্রকট হওয়ায়, রাষ্ট্রের আনুগত্য ও জনগণের সেবার বদলে দলীয় আনুগত্যই প্রধান প্রবণতা হয়ে উঠছে। অনিয়মও হয়ে উঠছে প্রতিযোগিতামূলক; পরের জন আগের জনের চেয়ে বেশি দলীয়করণ না করে নিরাপদ বোধ করবেন না।

প্রথম আলোর সংবাদে জনপ্রশাসনসচিব আবদুস সোবহান সিকদার বলেছেন, এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ সমস্যাকে সুবিধা মনে করার এই মনোবৃত্তি দলীয় মনোবৃত্তি। এ ব্যাপারে সরকারের সায় নিশ্চয়ই আছে; কিন্তু জনগণের সায় নেই, সৎ ও দক্ষদের সায় নেই; সর্বোপরি সংবিধানের সায় নেই। প্রশাসনের স্বার্থেই এ ধরনের পদোন্নতি বন্ধ হোক, প্রশাসনিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সবকিছু করা হোক। সুশাসনের পথে এটাই নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ।

সৌজন্য: প্রথম আলো




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025