সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৮

পিপিআরসির প্রতিবেদন: রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা কম

পিপিআরসির প্রতিবেদন: রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা কম

শীর্ষবিন্দু নিউজ: পিপিআরসির প্রতিবেদন হাতে বিলিয়া মিলনায়তনে অতিথিরা। সুশাসনের দিক থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা সবচেয়ে কম। অনাস্থার দিক থেকে এরপরেই পুলিশের স্থান এবং এই তালিকায় তৃতীয় হচ্ছে বিচার বিভাগ। গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) বাংলাদেশ ২০১৩: সুশাসন প্রবণতা ও ধারণাসমূহ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। আজ শনিবার পিপিআরসির এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় রাজধানীর বিলিয়া মিলনায়তনে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের সভাপতিত্বে এতে আলোচক ছিলেন আরেক সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দিন খান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, আইজিএস ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক সুলতান হাফিজ রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবীর। মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৫০০ খানা জরিপের অভিজ্ঞতা এবং ২০১১ সালের আদমশুমারিতে থাকা ২৫টি সরকারি সংস্থার তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয় এই প্রতিবেদন। এতে ২০০১ থেকে ২০১০ অর্থাত্ ১০ বছরের হত্যা, অপহরণ ও পাচার, পুলিশি হয়রানি, মামলা নিষ্পত্তি, থানা ও আদালতে মামলা, আর্থিক অপরাধের ইত্যাদি চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের আস্থা সূচক নির্ণয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ, বিচার বিভাগ, আইনের শাসন ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বিবেচনায় নেয় পিপিআরসি। এতে বলা হয়, ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের আস্থা কমেছে। ৭১ দশমিক ২ শতাংশের আস্থা কমেছে পুলিশের প্রতি। বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা কমেছে ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশের। এ ছাড়া আইনের শাসনের প্রতি ৫০ দশমিক ৬ এবং র্যাবের প্রতি ২৬ দশমিক ৮ শতাংশের আস্থা কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে মানুষ হত্যা ছিল বছরে তিন হাজার ৪৭৯। ২০১০ সালে তা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৮৩০। ১০ বছরের গড় তিন হাজার ৭৬৬ দশমিক তিন। লাখে মানুষ হত্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ২০০১ সালে ধর্ষণ ছিল তিন হাজার ১৮৯টি, ২০১০ সালের এই সংখ্যা তিন হাজার ৩৪২। অপহরণ, পাচার ও অন্যান্য মিলিয়ে ২০০১ সালে ছিল ৮৩৪টি ঘটনা। ২০১০ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭০টিতে। তবে শিশু নির্যাতনের হার ১০ বছরে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০০১ সালে যে সংখ্যা ছিল ৩৮০, ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৫৪২।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, বৈশ্বিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মন্দ নয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধিও ভাল। কিন্তু সুশাসনের ক্ষেত্রে এখনো দুর্বল। সুশাসন ও অপরাধ বিষয়ে পিপিআরসি যেসব পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে সেগুলোর সঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরার পরামর্শ দেন রেহমান সোবহান।

আকবর আলি খান বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুশাসনবিষয়ক ভালো একটি সূচক তৈরি করতে হবে। বিশ্বব্যাংক সুশাসনবিষয়ক সূচক তৈরি করলেও সেটি আমাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই দেশীয়ভাবেই সূচক তৈরি করতে হবে। রাতারাতি করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিপিআরসি প্রাথমিকভাবে এ ধরনের সূচক তৈরির কাজ শুরু করেছে।

আকবর আলি খান বলেন, অর্থনৈতিকভাবে যতই প্রবৃদ্ধি অর্জন করি না কেন সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না হলে সুশাসনের সমস্যা দূর হবে না। এক্ষেত্রে নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের আগে পুলিশ যখন তথ্য যাচাই করতে যায়, জানতে চাওয়া হয় তিনি ছাত্রদল নাকি ছাত্রলীগ করেন। সর্বশেষ কাকে ভোট দিয়েছেন ইত্যাদি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে র্যাবের বক্তব্য সব সময় একই। আটক ব্যক্তিকে নিয়ে বিশেষ অভিযানে যাওয়ার পর ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা র্যাবের ওপর হামলা চালায় আর তাতে আটক ব্যক্তি মারা যান। সব সময় যদি একই ধরনের ঘটনায় ঘটে তাহলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো করে কী? কেন তারা ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের খবর পুলিশকে জানাতে পারে না।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কী আমরা ধরে নেব এর আগে প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি না বলা পর্যন্ত তাঁর দলীয় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না?




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025