শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেনে গত তিন মাস ধরে চলে আসা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশি অভিযান শুরুর পর রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী কিয়েভে। সোভিয়ত ইউনিয়ন ভেঙে স্বাধীন হওয়ার পর ভয়াবহতম এই সংঘাতে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত হওয়ার ঘবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ইউক্রেন আরো দুইশ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার পর নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার দিনের বেলায় প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইউনুকোভিচের ক্ষমতা কমানোর দাবিতে মিছিল নিয়ে পার্লামেন্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ বাঁধে। দুপুরে সরকারি দলের একটি কার্যালয়ে ভাংচুর ও লুটতরাজ চালানো হয় বলেও খবর পাওয়া যায়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে ময়দান নামে পরিচিত এই স্বাধীনতা চত্বর ঘিরে ফেলে স্টান গ্রেনেড ফাটাতে ফাটাতে সাঁজোয়া যান আর জল কামান নিয়ে অগ্রসর হয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের পেট্রোল বোমা ও হাতে তৈরি বিস্ফোরক দিয়ে জবাব দিতে শুরু করলে পুরো পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর কিয়েভের বিভিন্ন অংশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, সরকারবিরোধীদের আস্তানা হিসাবে ব্যবহৃত একটি ভবন দূর থেকে জ্বলতে দেখা যায়। রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয় ইউক্রেনের রাজধানী, বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
গত নভেম্বের থেকে কিয়েভের স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ২৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে সরে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তারা অবস্থান চালিয়ে যাওয়ায় ৬টা বাজার ঠিক আগে আগে শুরু হয় পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। এই সংঘাতে বুধবার প্রথম প্রহর পর্যন্ত সাত পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়।
ইউক্রেনের বিরোধী দল উদার পার্টির নেতা ভাইতালি ক্লিসকো স্থানীয় এক টেলিভিশনে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইউনুকোভিচের সঙ্গে দেখা করে সঙ্কট উত্তরণে আলোচনার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। প্রেসিডেন্টের একটাই বক্তব্য- বিক্ষোভকারীদের মংদান ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। গত নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে না গিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার ঋণ নেয়ার পর ইউক্রেনে সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পার্লামেন্টে বিক্ষোভ বিরোধী বিভিন্ন আইন পাসকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সহিংস রূপ পায়।
কিয়েভের মেট্রো ট্রেন মঙ্গলবার রাত থেকেই পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে বাইরে থেকে যানবাহন আসতেও বাধা দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ইউক্রেনের এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অবশ্য রাশিয়া এ পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমা দেশগুলো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে দায়ী করছে।