শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে থাইল্যান্ড। দেশটির শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ডিএসআই)-এর প্রধান তারিত পেংডিথ এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেই সেনাপ্রধান জেনারেল প্রায়ুথ চান-ও-চা একই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, সব পক্ষ যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখায় তাহলে দেশে গৃহযুদ্ধ দেখা দেবে। সরকার বিরোধীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ছেড়ে গেছেন রাজধানী ব্যাংকক। তবে ব্যাংককের বাইরে কোথায় আছেন তিনি সে বিষয়টি গোপন রয়েছে। একজন বৈধ প্রধানমন্ত্রী এভাবে গোপনে লুকিয়ে থাকাকে অনেকে পালিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। থাইল্যান্ডে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
কিন্তু এমন গুজবের ব্যাপারে সরকারি কোন ভাষ্য মেলেনি। ব্যাংককের বেশির ভাগ অংশ সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে এখন। এমন অবস্থায় গতকাল ইংলাক সমর্থক লাল শার্ট নেতা নাত্তায়ুথ সাইকুয়ার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বলেছেন, তারা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংককে সমাবেশ করতে প্রস্তুত। সপ্তাহান্তে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের একটি র্যালি করবেন তারা। কোন পক্ষই ছাড় দেয়ার মনোভাবে নেই। এমন অবস্থায় দু’পক্ষই যদি রাস্তায় নেমে আসে তাহলে সেখানে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে যে সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে তা একেবারে অমূলক নয়। এমনিতেই রাজনীতিবিদদের সাধারণ ক্ষমা বিষয়ক বিল পাস করে বিরোধীদের প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা।
তার ওপর গত ২রা ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি একতরফা একটি নির্বাচন করেন। এ নির্বাচন তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। ব্যাংককে প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে বন্দুকের গুলি। গ্রেনেড হামলার শব্দ। সর্বশেষ এমন হামলায় আহত চতুর্থ এক শিশু গতকাল মারা গিয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে চলা এই রাজনৈতিক সঙ্কট এখন ভয়ঙ্কর এক রূপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য রাজপথে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৭শ মানুষ আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা চাইছেন থাইল্যান্ডের রাজনীতি থেকে সিনাওয়াত্রা পরিবারের বিদায়। গতকাল যে শিশুটি মারা গেছে তার বয়স ৫ বছর। গত ছুটির দিনে থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে বিরোধীদের এক র্যালিতে অস্ত্রধারীরা বুলেট ছোড়ে। রোববার নিহত হয়েছে চার বছরের একটি শিশু ছেলে ও তার বোন (৬)। থাইল্যান্ডের ডিএসআই সংস্থাকে দেখা হয় ‘এফবিআই’ হিসেবে। চলমান সঙ্কটে এ সংস্থার প্রধান হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, থাইল্যান্ড দ্রুত গৃহযুুদ্ধের দিকে যাচ্ছে। ওদিকে সেনাপ্রধান প্রায়ুথ বলেছেন, তারা এবার ক্ষমতা দখল করবেন না।
গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে সবাইকে বিরত থাকতে হবে এবং ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। বিরল এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেছেন, যদি ধ্বংসের এই দ্বারপ্রান্ত থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনা না হয় তাহলে থাইল্যান্ড ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-সমর্থকরা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলছে, তারা সেনা বাহিনীকে ক্ষমতা দখলে উস্কানি দিচ্ছে। ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ইংলাকের ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকেই রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল থাইল্যান্ডের সামুত প্রাকান প্রদেশে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর কিছু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে অনেক শ্রমিক।
এখন উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে যে, শিগগিরই সরকারের পক্ষে অবস্থান নিতে রেড শার্ট রাস্তায় নামবে। যদি তা-ই হয় তাহলে আরও সংঘাত অনিবার্য। ওদিকে আগামীকাল দুর্নীতির এক মামলায় দুর্নীতি বিরোধী একটি প্যানেলের সামনে তলব করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে। সেখানে শুনানির ওপর ভিত্তি করে তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে। গতকাল পর্যন্ত পরিষ্কার জানা যায় নি যে, ইংলাক সশরীরে ওই শুনানিতে হাজির হবেন কিনা। বিরোধী দলের অভিযোগ, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেলের সাজা পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রা এখন নির্বাসনে থেকে দেশ পরিচালনা করছেন তার বোন ইংলাকের মাধ্যমে। তারা চাইছেন, একটি অনির্বাচিত পিপলস কাউন্সিল। এরপর ১৮ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন করতে হবে। তার আগে দেশের সব কিছুতে সংস্কার করতে হবে।