মফিজুল সাদিক: বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ২২টি প্রকল্পই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ৪৩টি প্রকল্পের মধ্যে এই ২২টি অন্যতম। ২২ প্রকল্পের কাজের গতি ফেরাতে সোমবার থেকে দুই দিনব্যাপি ত্রিপাক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের যমুনা কনফারেন্স রুমে ‘এ পোর্ট ফোলিও রিভিউ’ শীর্ষক প্রথম দফা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিনে ১৫টি এবং মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে ৭টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) প্রকল্প ৩১টি এবং ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্প ১২টি। প্রকল্পগুলোতে ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করছে সংস্থাটি। ৪২টি প্রকল্পের মধ্যে ২২টি প্রকল্পের বেহাল অবস্থার চিত্র উঠে আসে বৈঠকের তথ্যে। ত্রিপাক্ষীয় মিটিংয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান, বিশ্বব্যাংকের অপারেশন এ্যাডভাইজার ক্রিস্ট্রিয়ান কিমস এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের অপারেশন এ্যাডভাইজার ক্রিস্ট্রিয়ান কিমস বলেন, এই রিভিইতে আমরা ধীরগতি সম্পন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের মোট ২২টি প্রকল্প নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রকল্পের কাজ যাতে দ্রুত এগিয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রকল্পের সুফল ভোগ করার জন্য প্রকল্পগুলোর গতি আনা ও মান নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। ক্রিস্ট্রিয়ান কিমস বলেন, গত ৪০ বছরে এই দেশকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা নানা ধরণের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছি। যে ধরনের প্রকল্পে লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যজড়িত, সে ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়নে উৎসাহ আসে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ(ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, ক্রয় প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরিতে ত্রুটি রয়েছে। সূত্রমতে, এছাড়া গতিহীন এসব প্রকল্পের অধিকাংশেরই মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও অর্থছাড় হয়েছে খুবই কম। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথম দফায় যেসব প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক হতাশা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হল ঢাকা পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প। বিশ্বব্যাংকের ১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের এ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু প্রায় চার বছর পার হলেও অর্থছাড় হয়েছে একেবারেই কম। চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্প, রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন, লোকাল গভর্মেন্স অ্যান্ড সার্ভিস প্রজেক্ট, রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ইমারজেন্সি ২০০৭ সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রেসটোরেশন প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংক হতাশা প্রকাশ করে।
এছাড়া একইভাবে স্ট্রেনদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন, সেকরেটারিয়েট ফর বিসিসিআরএফ প্রজেক্ট, ক্লাইমেট রিসাইলেন্ট পার্টিসিপেটরি রিফরেস্ট্রেশন অ্যান্ড রিফরেস্ট্রেশন, ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনএবল ইনভায়রনমেন্ট, সিদ্দিরগঞ্জ পিকিং পাওয়ার প্রজেক্ট, ডিসএবিলিটি অ্যান্ড চিলড্রেন অ্যাট রিস্ক প্রজক্টে এবং ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম নিয়ে প্রথম দিনে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া দ্বিতীয় দিনে মোট ৭টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসপিইএমপি এ-ডিপিনিং এমটিবিএফ অ্যান্ড এফএম একাউনটিবিলিটি, এসপিইএমপি বি-স্ট্রেনদেনিং দ্যা অডিটর জেনারেশ অফিস, এসপিইএমপি সি- স্ট্রেনদেনিং পার্লামেন্টারি ওভারসাইট প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়া, ইমার্জেন্সি-২০০৭ সাইক্লোন সেন্টার পুনর্বাসন প্রকল্পে মনিটরিং জোরদার করতে বলা হয়েছে। প্রকল্প শুরুর পর চার বছর কেটে গেলেও প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে নামমাত্র।
একই দিনে ইনভেসমেন্ট প্রমোশন ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি , প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট, হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি ইনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট ও সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড একসেস ইনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পসহ মোট ২২টি প্রকল্প নিয়ে ত্রি-পাক্ষীয় বৈঠক হয়। বিশ্বব্যাংকের হতাশা প্রকাশ করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্প। দুই বছরে এর অর্থছাড় খুবই অল্প। এ প্রকল্পের এখনও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমই শেষ হয়নি।