শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:৩৫

বিজ্ঞানময় আল কুরআন

বিজ্ঞানময় আল কুরআন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মো: গনি মিয়া বাবুল: আল কুরআন মহান আল্লাহ্ তায়ালার বাণী। মানব জাতির হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কুরআনের পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাবের সারবস্তু এবং পৃথিবীর সব জ্ঞানবিজ্ঞান তার মধ্যে সন্নিবিষ্ট আছে বলেই তাকে কুরআন বলা হয়। কুরআনের অপর একটি নাম আল হাকিম অর্থাৎ জ্ঞান ভাণ্ডার। মানুষের প্রয়োজনীয় এমন কোনো বিষয় নেই, যা এই কুরআনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং আল কুরআনকে ৫৫টি নামে পরিচিহ্নিত করেছেন। প্রত্যেকটি নামের মধ্যেই এই কিতাবের গুণাবলি, অনন্যতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। উল্লিখিত এসব নামের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালা কুরআন মাজিদকে হাকিম (বিজ্ঞানময় বা জ্ঞানভাণ্ডার), ফোরকান (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী), আজ্জিকর (উপদেশ) আন্নূর (জ্যোতি) প্রভৃতি নামে সম্বোধন করেছেন। এক কথায়, আল কুরআন হচ্ছে জ্ঞানবিজ্ঞানে সমৃদ্ধ মানবজাতির হেদায়েতের মহাগ্রন্থ।

বিজ্ঞান যেহেতু মানবের তৎপরতা ও মানবজাতির অগ্রগতির জন্য আল্লাহ্ তায়ালা প্রদত্ত একটি বিশেষ জ্ঞান, তাই কুরআনের প্রায় সর্বত্রই জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রকৃতি পরিবর্তন, বিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। অথচ অজ্ঞতার কারণে অনেকেই বিজ্ঞানকে ধর্মীয় বিষয়ের অঙ্গীভূত বলে মনে করতে চান না। বিজ্ঞানের যতই উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার পরিচয় ও তাঁর সৃষ্টি রহস্যের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিন্যাস ও কৌশলের সাথে পরিচিত হয়ে মানুষ ততই আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

বর্তমান সময়কে বলা হয় বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগ। বিজ্ঞানকে জানা মানে আল্লাহ্ ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে জানা, আল্লাহ্র সৃষ্টিরহস্যের সাথে পরিচিত হওয়া, আল্লাহ্র দেয়া বিশেষ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবতার কল্যাণ সাধন করা। এ যুগের তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞান প্রযুক্তির আবহে বেড়ে উঠছে, ফলে তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই জানতে হবে যে, মহাগ্রন্থ আল কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্র নিয়ামত, দিকনির্দেশনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের এক অনন্ত ভাণ্ডার, তাহলে তারাই সর্বাগ্রে আঁকড়ে ধরবে এই পবিত্র কুরআনকে এবং এর আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে তাদের মেধা ও মনন, অন্যথায় তারা হবে বিভ্রান্ত। পবিত্র কুরআনের মোট আয়াত সংখ্যার মধ্যে প্রায় এক-অষ্টমাংশই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে নিবেদিত। কুরআন আরিক অর্থে কোনো বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়, কাজেই বিজ্ঞানের সব নীতিই এর মধ্যে হুবহু সন্নিবিষ্ট পাওয়া যাবে এমন আশা করা যেতে পারে না। তবে প্রকৃত ঘটনা ও বিজ্ঞানের সূত্র নিয়ে আলোচনার েেত্র কুরআনের নিজস্ব ভঙ্গিমা রয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলোর মূল প্রতিপাদ্য তুলে ধরে এবং বেশ কিছু ঘটনা বা সত্য সম্পর্কে ইঙ্গিতধর্মী বক্তব্য প্রদান করে, যাতে থাকে সর্বোচ্চসংখ্যক সূত্রসমূহ সম্পর্কে পরিষ্কার ইঙ্গিত। কুরআনের একটা বক্তব্য কোনো একটা নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক বিষয়ে ব্যাপক কথা তুলে ধরে।

একটি দৃষ্টান্ত বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলতে পারে। আল্লাহ্র পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমি কোনো কিছুই অযথা সৃষ্টি করি নাই।’ এই যে ঘোষণা, প্রকৃতপে এটি একজন আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানীর সর্বপ্রথম মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়বস্তু, যিনি উপলব্ধি করেন এই মাহবিশ্বের একটা সূক্ষ্ম ব্যবস্থাপনা রয়েছে, যাতে আমাদের বিঘ্ন সৃষ্টি করা উচিত নয়।

পৃথিবীতে প্রায় তিন কোটি প্রকারের জীবদেহ রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৫০ লাখের ওপর গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এসব জীবদেহের অনেকেরই কার্যগত উপযোগিতা কী, তা আমরা জানি না। অবশ্য অনেক সময়ই দেখা গেছে, এসব জীবদেহের জীবনধারায় মানুষ বিঘœ সৃষ্টি করে অনেক তিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আমরা যদি নাও জানি কোনো বিশেষ প্রজাতির জীবদেহের কাজ কী, তবুও এটি যাতে টিকে থাকতে পারে সে দিকে আমাদের সর্বাধিক দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ এই প্রজাতি বিলুপ্ত বা উচ্ছেদ হলে তা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ফলে দেখা যায় যে, পরিবেশ বা বাস্তুসংস্থান বিজ্ঞানের পরিপূর্ণ ভিত্তি কুরআনের এই ঘোষণা ব্যতীত আর কিছু নয় যে, কোনো কিছুই অযথা সৃষ্টি করা হয়নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের বিন্যাস করেছেন সঠিক অনুপাতে।’ সূরা আল-মুমিনুনে ভ্রূণস্তর থেকে ধাপে ধাপে মানবশিশু কিভাবে বেড়ে পূর্ণাঙ্গ মানবে পরিণত হয় তার উল্লেখ রয়েছে। এসব ধাপের কথা আল-কুরআনে বলা হয়েছে সপ্তম খ্রিষ্টাব্দে যখন ভ্রƒণতত্ত্ব বিজ্ঞানের উদ্ভাবনই ঘটেনি। ভ্রূণতত্ত্ব বিজ্ঞানের শাখা গড়ে উঠেছে মাত্র ১০০ বছর হয়েছে। পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত মানব ভ্রূণের ধাপে ধাপে বৃদ্ধির বিষয়টি মাত্র সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর সৃষ্টি এবং এর উন্নয়ন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে বলেছেন, যেন মানুষ জীববিদ্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং জীবনের রহস্য উন্মোচন করতে পারে। আমরা যাকে সৃষ্টিজগৎ বলে থাকি, তা আল্লাহরই এক প্রকার স্মারকচিহ্ন বা নিদর্শন। বিজ্ঞান মানুষকে এই স্মারকচিহ্নই বুঝতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে জ্ঞান ও বিশেষভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অবশ্যই ধর্মের সাথে সাথেই চর্চা করতে হবে। বস্তুত কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী বিজ্ঞান অন্যান্য মানবিক কর্মতৎপরতার মতোই ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিজ্ঞান আমাদের শিা দেয় কিভাবে প্রকৃতি কাজ করে এবং এই শিা আমাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য উৎপন্ন দ্রব্য ও প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে সম করে, তেমনি ধর্ম আমাদের শিা দেয় সেই সব মূল্যবোধ, যা আল্লাহ্ আমাদের চর্চা করতে বলেন, যাতে জীবনের মূল্যবোধ ও উপযোগিতার দিকগুলো সুসমন্বিতভাবে সংমিশ্রণ ঘটানো যায়। কাজেই বলা যায় যে, বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয়ই প্রয়োজন। বিজ্ঞান বস্তুগত জ্ঞান দান করে, ধর্ম সেই জ্ঞানকে ব্যবহারের মূল্যবোধ শিা দেয়। ধর্ম মানুষকে আহ্বান জানায় সৃষ্টিজগৎ ও স্রষ্টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে। বিজ্ঞান সৃষ্টিকে বুঝার মতো জ্ঞান দান করে এবং সৃষ্টিই স্রষ্টার নিদর্শন হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সত্যিকার অর্থে কোনো বিরোধ নেই। মূলত আল কুরআন ও বিজ্ঞানের মধ্যেও কোনো বিরোধ নেই। তবে পবিত্র কুরআন আল্লাহ্র বাণী, অপরিবর্তনশীল ও সংরতি। আর মানুষের গবেষণা ও অকান্ত অনুশীলনের ফলে গড়ে উঠেছে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। বিজ্ঞানসহ মানবজীবনের সব কর্মতৎপরতাই আল কুরআনের আওতাভুক্ত।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024